PCR বা Polymerase Chain Reaction হচ্ছে একধরনের জীবপ্রযুক্তি যার মাধ্যমে স্বল্প সময়ে ডিএনএ এর অসংখ্য কপি তৈরি করা সম্ভব। ব্যাপারটি কে অনেকটা ফটোকপি মেশিনের মতো কল্পনা করা যায় যেখানে কাগজের পরিবর্তে ডিএনএ এর সুনির্দিষ্ট অংশ বা জিন এর কপি তৈরি করা হয়। রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ, ডিএনএ ক্লোনিং কিংবা রিপ্রোডাক্টিভ ক্লোনিং এর মতো প্রযুক্তির সাথে PCR এর অন্যতম পার্থক্য হলো এক্ষেত্রে অণুলিপন এর জন্য জীব কোষের প্রত্যক্ষ প্রয়োজন হয় না, এমনকি কোষের বাইরে একটি টেস্টটিউবেই সম্পন্ন করা যায় যা একে ব্যবহারিক প্রয়োগের দিক থেকে যথেষ্ট কার্যকরী করে তুলেছে।

 ১৯৮৩ সালে আমেরিকান বিজ্ঞানী Kary Mullis কোষ বহির্ভূত ভাবে ডিএনএ ক্লোনিং এর এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন এবং সেজন্য ১৯৯৩ সালে নোবেল পুরস্কারও লাভ করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে Cetus Corporation এ কর্মরত থাকাকালীন তিনি এক রাতে প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে ধরে গাড়ি হাঁকিয়ে যাচ্ছিলেন। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, গাড়ি চালানোর সময় মনে মনে ডিএনএ মিউটেশন বিশ্লেষণের নতুন উপায় নিয়ে চিন্তা করার সময়ই ডিএনএ পলিমারেজ এনজাইম এর মাধ্যমে DNA amplification এর এই পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলেন।


PCR প্রক্রিয়ার জন্য যা প্রয়োজনঃ নির্ধারিত ডিএনএ খণ্ড, বাফার দ্রবণ, প্রাইমার,পলিমারেজ এনজাইম, নিউক্লিয়োটাইড ইত্যাদি

PCR কীভাবে কাজ করে?



1. Denaturation:
এটি PCR প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। এই ধাপে প্রথমে ডিএনএ এর দ্বিসূত্রক প্যাঁচ খোলা হয়। এ কাজের জন্য প্রায় ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। আমরা জানি অর্ধসংরক্ষণশীল পদ্ধতিতে ডিএনএ অণুলিপন এর ক্ষেত্রে ডিএনএ এর দ্বিসূত্রক প্যাঁচ খুলতে সহায়তা করে হেলিকেজ এনজাইম এবং প্রক্রিয়াটি ঘটে কোষের ভেতরে। কিন্তু যেহেতু PCR সম্পন্ন হচ্ছে দেহের বাইরে সেজন্য এনজাইমের পরিবর্তে তাপ প্রদানের মাধ্যমে দ্বিসূত্রক প্যাঁচ খোলা হয়।


2. Annealing: এ ধাপে তাপমাত্রা কিছুটা কমিয়ে আনা হয় (প্রায় ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং প্যাঁচবিহীন প্রতিটি সূত্রকের প্রান্তে প্রাইমার যুক্ত করা হয়। প্রাইমার হচ্ছে RNA এর কয়েকটি ক্ষারকের সংক্ষিপ্ত সিকুয়েন্স। প্রাইমার মূলত পলিমারেজ এনজাইমকে কোথা থেকে সংশ্লেষণ শুরু করতে হবে তার নির্দেশ দেয়।


3. Synthesis: প্রাইমার সংযুক্ত হওয়ার পর পলিমারেজ এনজাইম প্রাইমারের নির্দেশ অনুযায়ী নিউক্লিয়োটাইড এনে ডিএনএ এর ৫' প্রান্ত থেকে ৩' প্রান্তে নতুন সূত্রক তৈরি শুরু করে এবং এক পর্যায়ে একটি ডিএনএ থেকে দুটি নতুন কপি তৈরি হয়। এই ধাপে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায় (প্রায় ৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এক্ষেত্রে ডিএনএ পলিমারেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয় taq polymerase বা Thermus aquaticus polymerase.


এর কারণ হলো সব ধরনের এনজাইম সকল তাপমাত্রায় সমান কর্মক্ষম নয়। যেহেতু PCR প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা কিছুটা উচ্চ থাকে তাই এক্ষেত্রে তাপসহনীয় পলিমারেজ এনজাইম প্রয়োজন। Taq polymerase উৎপন্ন হয় Thermus aquaticus নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে যা উচ্চ তাপমাত্রা (প্রায় ৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) সহনীয়। তাই taq polymerase এনজাইম PCR এর তুলনামূলক উচ্চ তাপমাত্রায়ও কার্যক্ষম থাকে। এটি প্রথম পৃথক করা হয় ১৯৬৯ সালে আমেরিকার Yellowstone National Park থেকে। এভাবে খুব সহজ কিছু ধাপে কয়েক ঘণ্টা মধ্যেই ডিএনএ খণ্ডের কোটি কোটি কপি তৈরি করা সম্ভব। (n বার প্রক্রিয়াটি চালনা করলে 2^n সংখ্যক ডিএনএ কপি)


জীবপ্রযুক্তি PCR এর প্রয়োগিক ক্ষেত্রে: করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে PCR test


প্রকৃত অর্থে ডিএনএ এর কপি তৈরি করা প্রয়োজন এমন যেকোনো প্রযুক্তিতেই PCR বেশ কার্যকরী। উদাহরণ হিসেবে আমরা বর্তমান সময়ের প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে PCR test এর কথাই বলতে পারি। তবে এ প্রক্রিয়াটি সাধারণ PCR থেকে কিছুটা ভিন্ন। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণের প্রযুক্তিটি হচ্ছ reverse transcription Polymerase Chain Reaction বা RT-PCR। কারণ আমরা জানি SARS-COV-2 হচ্ছে একটি RNA ভাইরাস কিন্তু PCR এর জন্য প্রয়োজন ডিএনএ খণ্ড। তাই দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহের পর প্রথমে নমুনা থেকে রাসায়নিক দ্রবণের মাধ্যমে প্রোটিন, চর্বি ও অন্যান্য উপাদান আলাদা করে RNA কে পৃথক করা হয় যা ব্যক্তির নিজস্ব জেনেটিক RNA এবং ভাইরাল RNA এর মিশ্রণ (যদি ভাইরাস উপস্থিত থাকে)। এই RNA থেকে reverse transcription প্রক্রিয়ায় cDNA (complementary DNA) তৈরি করা হয়।


DNA‌ ---> RNA = transcription

RNA ---> DNA = reverse transcription

অতঃপর পূর্বের পদ্ধতিতে cDNA এর অসংখ্য কপি তৈরি করা হয়। এই চক্র প্রায় ৪০ বার চালানো হয় যতক্ষণ না পর্যন্ত  ফ্লোরেসেন্ট পদার্থের সংকেতের মাধ্যমে ভাইরাল DNA শনাক্ত হয়। যে কয়বার চক্রটি চালানোর পর নির্দিষ্ট পরিমাণ ফ্লোরেসেন্ট পদার্থ উৎপন্ন হওয়ার মাধ্যমে সংকেত প্রদান করে তাকে cycle threshold বা ct বলে। সাধারণত ct number 40 এর কম হলে ক্লিনিকালি ভাইরাস পজিটিভ বলে ধরে নেওয়া হয়। ভাইরাল ডিএনএ এর সুনির্দিষ্ট অংশ প্রচুর কপি করা এজন্য গুরুত্বপূর্ণ যে; মিলিয়ন মিলিয়ন জেনেটিক তথ্যের মধ্যে ভাইরাসের খুব সামান্য অংশ চিহ্নিত করার চেষ্টার পরিবর্তে যেন, বিজ্ঞানীদের কাছে ভাইরাল ডিএনএ এর টার্গেট অংশের

উপস্থিতি যথেষ্ট পরিমাণ থাকে।


এছাড়াও ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং, ফরেনসিক বিশ্লেষণ, অপরাধী শনাক্তকরণ, জিন সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণায় PCR ব্যবহার করা হয়। ফলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর অগ্রগতির ক্ষেত্রে এই জীবপ্রযুক্তিটি বিরাট ভূমিকা রাখছে।


তথ্যসূত্র: Wikipedia, Khan Academy, Amoeba Sisters  

For further reading about PCR's past, present and future perspective: https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC7439763/

For further reading about Covid -19 detection:https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC7197457/

1st photo source 

2nd photo source 

3rd photo source 


Sahran Akif Nizami
বর্তমানে একজন শিক্ষার্থী এবং ভবিষ্যতেও তাই। নতুন অভিজ্ঞতা মাত্র নতুন জ্ঞানের বাক্স বলেই তার বিশ্বাস। এই জ্ঞানের মানবিক প্রয়োগে মনুষ্যত্ব অর্জনের আরেক ধাপ উপরে ওঠার চেষ্টাই চলছে।