অটোমান সাম্রাজ্য: গেরিলা বাহিনী আকিনজিলার
"আকিনজি" শব্দটি তুর্কী ভাষার শব্দ; যার অর্থ আক্রমণকারী, এরা ওসমানীয় বাহিনীর অনিয়মিত লাইট ক্যাভালরি বা ঘোড়সওয়ারী যোদ্ধা ছিলো। এদেরকে স্কাউট ডিভিশন ও অ্যাডভ্যান্সড ওসমানীয় মিলিটারি বাহিনীতেও দেখা যেতো। "দেভলেতে ওসমানলিলার" বা ওসমানীয়দের রাষ্ট্রে যোদ্ধাদের অভাব ছিলো না। গাজীরা সবসময়ে আর্মিতে যোগদান করে আমিরের নেতৃত্বে যুদ্ধের সুযোগ খুঁজতো। তাই একবার এই বিপুল সংখ্যক মানুষগুলোকে কীভাবে দেশের উপকারে কাজে লাগানো যায় চিন্তা করলেন সুলতান। এদেরকে নিয়েই গঠিত হয় "আকিনজিলার" বা আকিনজি বাহিনী। এরা বেতনভুক্ত যোদ্ধা ছিলেননা। এরা ওসমানীয় সাম্রাজ্যের ফ্রন্টিয়ার রেইডার বা সীমান্তের আক্রমণকারী বাহিনী ছিলো। এনারা শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করে গনিমতের অংশ লাভ করতো।
আকিনজি ও দেলিগণ আলাদা আর্মি ইউনিট ছিলো। যুদ্ধক্ষেত্রে এদের দায়িত্ব ছিল অ্যাডভ্যান্সড অটোমান আর্মীর হয়ে যুদ্ধের প্রথম কাতারে থেকে শত্রুপক্ষকে আক্রমন করা। এরা গেরিলা ট্যাকটিক্স ব্যবহার করতো এবং সামনে অগ্রসররত শত্রুবাহিনীকে হতাশ করে সিদ্ধান্তহীনতায় ফেলে দিতো, যা শত্রুপক্ষের মধ্যে অটোমান সাম্রাজ্য নিয়ে এক বিরাট আতংক ও হার মানার ভাব নিয়ে আসতো।
অটোমান সাম্রাজ্য নিয়ে ইতিহাসবিদগণের আলোচনায় আকিনজিদের তুলনা করা হতো গমভর্তি মাঠে ধারালো কাস্তে হিসেবে "Scythe in the wheat field" অর্থাৎ এরা যুদ্ধের ময়দানে এতটাই দুর্ধর্ষ হয়ে যেতো, যে এদের শত্রুরা ভয়ে মাঠভর্তী গম হয়ে যেত আরে এরা হয়ে যেতো সেই গম কাটার ধারালো কাস্তে। এরা মিলি অ্যাটাক ও তীরন্দাজি তে সিদ্ধহস্ত ছিল। মিলি অ্যাটাক Melee attack হলো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। আবার দেখা যেতো যুদ্ধের ময়দানে যখন শত্রুরা এদের পিছু করছে তখন এরা চলন্ত ঘোড়া থেকে পেছন ফিরে তীর ছুড়তে পারতো। যুদ্ধক্ষেত্রে এরা লাইট ক্যাভালরি হওয়ার কারণে মাঝেমধ্যে হ্যাভি ক্যাভালরি কেও ক্ষিপ্রতায় ছাড়িয়ে যেত।
আরও পড়ুনঃ দেলিলার: অটোমান সাম্রাজ্যের গেরিলা
আকিনজিদের ঘোড়াগুলোকে আলাদাভাবে ট্রেনিং ও ব্রিডিং করানো হতো, যার ফলে তাদের ঘোড়াগুলোও অন্যান্য ঘোড়া থেকে আলাদা ছিল। এদের ঘোড়াগুলোর ক্ষিপ্রতা অনেক বেশী হতো। আকিনজিরা যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতো যুদ্ধ কুড়াল, তলোয়ার, বল্লম, ও ঢাল। ওদের এতো অস্ত্র বহনের কারণ ছিলো ওরা যুদ্ধক্ষেত্রে সবার আগে গিয়ে শত্রুবাহিনীর উপর মিলি অ্যাটাক করতো। অটোমান সাম্রাজ্যের কোনো কোনো যুদ্ধে ওসমানীয়রা কোনো হ্যাভি ক্যাভালরি ডিপ্লয়ই করতো না, কারণ আকিনজিরাই যথেষ্ট ছিলো। যেমন- ১৪৯৩ সালের কারবাভার যুদ্ধ।
অনেক সময়ে দেখা যেতো অটোমান সাম্রাজ্যের কোনো এলাকায় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে সেখানকার লোকদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে বা সুরক্ষিত কোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতো। এর জন্য আকিনজিদের ব্যবহার করা হতো। কারণ আকিনজিরা অত্যন্ত মোবাইল বা সচল ছিলো। এরা শত্রুপক্ষের এলাকায় ও গ্যারিসন বা ডিফেন্স ব্যবস্থায় খুব ক্ষিপ্রতার সাথে আক্রমন করতে পারতো। আর এ কাজে ওদের বিভিন্ন মিশনেও পাঠানো হত। ওদেরকে দিয়ে গ্যারিসনে হামলা করানোর কারণ ছিলো যাতে গ্যারিসন বা শত্রু ডিফেন্সে হামলা করে এরা শত্রুর দুর্বল স্পটগুলো জানতে পারে। অনেকসময়ে দেখা যেত শত্রুদের সাপ্লাই ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে হবে। তাই আকিনজিকে পাঠানো হতো। তারা হঠাৎ আক্রমন করে শত্রুদের সাপ্লাই চেইনের বা অস্ত্র, ঔষধ, খাদ্য সরবরাহ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতো। শত্রুদেশের বাণিজ্যিক পথেও আকিনজিরা হামলা চালাতে দক্ষ ছিল।
কিছু তুর্কমান বংশ যারা আকিনজিতে কাজ করতো তারা ছিলো- "মালকোশোগলু", "তুরহানলি", "ওমেরলি", "এভ্রেনোসওগলু", ও মিহালি। পরের পর্বে এদের নিয়ে আরো আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
References
Wikimedia Commons has media related to Akıncı.
George F. Nafziger and Mark W. Walton. Islam at War: A History. p. 95.
"Ottoman Turkish Uniforms WW1 History First World War Militaria Turkey Wargaming Military Insignia Uniform Crimea Crimean - Akinci Corps & Deli Cavalry (Janissary Period); 1860 Imperial Army Corps of Bashi-Bazouk". Ottoman Turkish Uniforms WW1 History First World War Militaria Turkey Wargaming Military Insignia Uniform Crimea Crimean. Archived from the original on 2015-01-23. Retrieved 2015-01-23.