লাজুক মুখের টুকটুকে বউ কিংবা বাহুর চামড়া ঝুলে পরা গিন্নী, চকচকে রোদ ওঠা গরমের দুপুরে বা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখ হাতে একটা তালপাতার পাখা নিয়ে বাতাস করছে, আর সামনে বসে পতিদেব আহার করছেন এদৃশ্য সরেজমিনে না দেখলেও বাংলার চলচ্চিত্র বা নাটকে দেখেনি এমন বাঙালি পাওয়া যাবে না।

আমরা যারা নব্বইয়ের দশকে জন্ম নিয়েছি তারা সৌভাগ্যবান। আমরা গরমের রাতে দাদী-নানীর কাছে ঘুমাতে যেতাম, রুপকথার গল্প শুনতাম আর শীতল বাতাস খেতাম। দাদী- নানীরা একটানা বাতাস করে যেতেন হাতপাখা দিয়ে। হাতপাখার মধ্যে তালপাতার পাখাই বেশি প্রচলিত। তালপাতার পাখাকে সংক্ষেপে তালপাখা বলা হয়।

ইতিহাস বলে, ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে হাতপাখার প্রচলন শুরু হয়। মধ্যযুগে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে তা চালু ছিল। পুরো ভারতবর্ষে এর ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। শুধু বাঙালি না; জানা যায় চীন দেশেও পাখার প্রচলন ছিল। তবে তালপাখার ইতিহাস আমাদের বঙ্গদেশেরই। কবে, কিভাবে, কোথায় এ তালপাখার উৎপত্তি তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না। তবে বাংলাদেশে রয়েছে এর শতবর্ষের ইতিহাস। এমনকি একটি এলাকার মূল হারিয়ে পুরো মহল্লার পরিচিতি হয়েছে “তালপাখার গ্রাম” নামে। কারণ ঐতিহ্যকে ধরে রেখে এখনও এই গ্রামে নারী, পুরুষ মিলে তালপাখা তৈরি হয়।

শুনে অবিশ্বাস্য লাগতে যে এই গ্রামটি রাজধানীর ভাটারা থানার ছোলমাইদ গ্রামই এখন “তালপাখার গ্রাম”। তাদের মূল কাঁচামাল তালপাতা। তালপাতার মানের উপর নির্ভর করে পাখার মান এবং টেকসই কেমন হবে তা। ভালোমানের তালপাতা পাওয়া যায় বৃহত্তর ময়মনসিংহতে। বর্তমান কারিগরদের পূর্বপুরুষরা ময়মনসিংহ থেকে তালপাতা সংগ্রহ করতেন। বছরের পৌষমাস থেকে তারা পাতা সংগ্রহ শুরু করতেন। তারপর সেগুলো শুকিয়ে নৌকায় করে ঢাকায় নিয়ে বাকি কাজ শুরু হতো। বাহারি রং, সুতা আর কাপড়ে সাজতো পাখাগুলো। কিছু আছে ডাটি পাখা, কিছু আছে ফোল্ডিং পাখা। মাঝারি ডাটি পাখা বেশি প্রচলিত। বৃহদাকার পাখাও আগের দিনে দেখা যেতো।

ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি থেকে বিক্রি শুরু হলেও মূলত বৈশাখি মেলায় এ পাখার বেচাবিক্রি চোখে পরে বেশি। গরমে এর চেয়ে বড় সঙ্গি আর কিছু হতে পারে না।

“তালের পাখা, প্রাণের সখা
গরমকালে দেয় দেখা”


বাড়িতে কেউ এলেই পিঁড়ি পেতে হাতপাখা এগিয়ে দেয়ার রীতি এখন প্রায় উঠেই গেছে। বৈদ্যুতিক বিষ্ময়ের পর হাতপাখার চলন নাই বললেই চলে। আগের দিনে “পাঙ্খাওয়ালা” রাখা হতো,পয়সা দিয়ে! ১৮৭০ সালের এই ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে।
তালপাতার পাখা হাতে বাতাস করা লেগে আছে বহুদিন থেকে।

[তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া,ইন্টারনেট ;
ছবি: রানা চক্রবর্তী, ইন্টারনেট]
আমি সাবরিনা মুস্তারী চৈতী। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২য় বর্ষের একজন ছাত্রী। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ আমাকে দূর্বল করে দেয়। প্রচুর বই পড়ি আর শখ মেটাতে লিখি। বর্তমানে বই পড়া ও লিখার পাশাপাশি কিছুটা ভালো সময় কাটাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছোট গল্প নামক ফেসবুক পেজের একজন এডমিন হিসেবে যুক্ত হয়েছি।