বারো বছরের একটি ছেলে বিচলিত মনে বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে।হাতে তার ছোট্ট একটা চিঠি। ছেলেটা কোন কিছু না বলেই চিঠিটা মায়ের হাতে ধরিয়ে দিল। চিঠিতে লেখা,

"আপনার সন্তান গণিতে অত্যন্ত দুর্বল। এতোই দুর্বল যে তাকে স্কুলে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এমন বোকা ছেলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আপনার বোকা ছেলেকে অন্যত্র নিয়ে যান।"

এমন চিঠি পাবার পর স্বভাবতই যেকোন মা বাবা চাইবে সন্তানকে মারধোর আর বকা দিতে। কিন্তু টমের মা প্রত্যুত্তরে চিঠির জবাব দিলেন কর্তৃপক্ষকে,

"আমার টমকে আমি কোথাও নিচ্ছি না। সে ঘরে বসেই পড়ালেখা করবে। কারণ আমার টম বোকা নয়।"  


গণিত না পারার কারণে সেই কৈশোরে স্কুল থেকে বিতাড়িত হ‌ওয়া টম আজকের শতাব্দীর অন্যতম সেরা উদ্ভাবক ও বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন। এডিসনের জন্ম ১৮৪৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার ওহাই অঙ্গরাজ্যের ম্যানিলা শহরে এক দরিদ্র পরিবারে। স্কুল লাইফে থুবড়ে পড়া এডিসনের জন্য বিজ্ঞানের যাত্রা মোটেও শুভকর ছিল না। সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে আসতে গিয়ে তাঁকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। প্রথম জীবনে অভাবে তাড়নায় নাবালক বয়সেই এডিসন পত্রিকার হকারিং, সবজি ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর আয়ের বেশিরভাগ ব্যয় করতেন বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম ক্রয়ে। সেসময় একজন অপারেটরকে ট্রেন ধাক্কায় বাঁচানোর সুবাদে তাঁর নিউজ অফিসে অপারেটরের চাকরি পান। ফলে তাঁর গবেষণার কাজ আরো একধাপ এগিয়ে যায়। এরপর কপার ইউনিয়ন অব সাইন্সের অধীনে চার বছর মেয়াদী রসায়নের কোর্স সম্পন্ন করেন।  

এডিসনের আবিষ্কারের ঝুলিতে আছে  ফোনোগ্রাফ, অডিও রেকর্ডার, আধুনিক ব্যাটারি, ভিডিও ক্যামেরা, বৈদ্যুতিক বাতি, গ্রামোফোনের পাশাপাশি ১০৯৩ টি আবিষ্কারের পেন্টেট। এছাড়াও ৫০০- ৬০০ টির মতো অসফল পেন্টেট‌ও আছে যা শেষ পর্যন্ত করে যেতে পারেননি। তাঁর প্রথম আবিষ্কার ছিল স্টক প্রিন্টার যা দিয়ে শেয়ার বাজারের স্টক ওঠানামা করতো। ১৮৭৮ সালে তিনি আবিস্কার করেন দীর্ঘস্থায়ী বৈদ্যুতিক বাল্ব যা ছিল পৃথিবীর যুগান্তকারী আবিষ্কারগুলোর একটি। তাঁর উদ্ভাবিত বৈদ্যুতিক বাল্ব সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে তিনি ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এডিসন কোম্পানি। কয়েক দশকের ব্যবধানে এটি পৃথিবীর শীর্ষ কোম্পানিতে পরিণত হয়।

এডিসনের আবিষ্কার যেমন বিজ্ঞানে বৈচিত্র্য এনেছে তেমনি উনিশ থেকে বিশ শতকে মানবজীবনে এনেছিল ব্যাপক পরিবর্তন। তাঁর উদ্ভাবিত ভিডিও ক্যামেরা চলচ্চিত্রের শিল্পের সূচনা করে। বিশ্বের প্রথম চলচ্চিত্রের রেকর্ডিং তাঁর ক্যামেরা দিয়েই করা হয়। এছাড়া গ্রামোফোনের ব্যবহার সংগীতশীল্পে আধুনিকায়নে আরো একধাপ এগিয়ে যায়।

ছোটবেলায় এডিসন লালজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেসময় এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফলে তাঁর একটি কান বধির হয়ে যায়। একটি কান বধির হলেও আরেকটি কান দিয়ে শুনতে পেতেন। 

১৯৩১ সালের ১৮ অক্টোবর টমাস আলভা এডিসন মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

ছোটবেলায় অন্ধকার বলে গাল খাওয়া এডিসন নিজ মেধা ও প্রচেষ্ঠায় তাঁর বৈদ্যুতিক বাল্ব দিয়ে করেছিলেন সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত।প্রতিটি মানুষের সাফল্যের পিছনেই থাকে কিছু কঠিন গল্প। এডিসনের জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় মানুষের সমালোচনায় ঝরে না পড়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলা। সেই সাথে সমগ্র সমাজ কারো বিপক্ষে গেলেও যদি পরিবার তাঁর পক্ষে থাকে তবে অবশ্যই সে সফল হবে।

১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ছিলো এই মহান প্রতিথযশার ১৭৪ তম জন্মবার্ষিকী। 


মাশফিকুর রহমান হিমেল 
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়