যিশুর ক্রুশবিদ্ধকরণ: একটি রাজনৈতিক হত্যা - লিখেছেন - ফারহানা ইমা
জেরুজালেমের মতো এমন বৈচিত্র্যময় ইতিহাসের শহর সম্ভবত পৃথিবীতে আরেকটি নেই। যিশুর জন্মস্থান হিসেবে যে বেথেলহামকে ( যেখানে হাজার বছর আগে জন্মেছিলেন রাজা ডেভিড অর্থাৎ হযরত দায়ূদ আ: ) ভাবা হয় সেটি এই জেরুজালেমের দক্ষিণ দিকে একটি ছোট শহর। রাজা ডেভিডের শাসনকালে ( খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সাল) এই অঞ্চলের ইহুদীরা বেশ ক্ষমতাসম্পন্ন স্বাধীন জাতি হিসেবে থাকলেও পরবর্তীতে এরা দুর্বল হতে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ সালে ব্যবিলনের অধিবাসীদের আক্রমণ এবং তারপরে পারস্যের অধীনে থাকা এই ইহুদীদের কোনো রাজা না থাকলেও তারা ছিল ভয়ংকর একেশ্বরবাদী আর স্বাধীনচেতা। রোমানরা খ্রিস্টপূর্ব ৬০ সালের দিকে পূর্বদিকে সাম্রাজ্য বাড়াতে অগ্রসর হলে এই ইহুদীদের মধ্যে এক প্রকার বিদ্রোহ আর গৃহযুদ্ধ লেগে যায়। রোমানরা তাই এদেরকে নিজেদের হাতে রাখতে নিজেদের পছন্দসই একজনকে শাসক হিসেবে নিয়োগ করেন যার নাম অ্যান্টিপ্যাটার। এই অ্যান্টিপ্যাটারের ছেলে হেরোডের শাসনকালেই যিশুর জন্ম।
যিশু যখন প্রাপ্তবয়স্ক তখন তার অনেক অনুসারী। মূলত তার আদর্শ, শিক্ষা ও ব্যক্তিত্ব মানুষকে ভীষণ আকর্ষণ করত। তার মধ্যেই মাসিহার বৈশিষ্ট্য দেখা দিতে লাগল। গ্রিক ভাষায় "খ্রিস্টিয়করণ" মানে "পবিত্রকরণ" আর হিব্রুতে "মাসিহা" কে বলা হয় "যশোয়া"। এখান থেকেই ইংরেজীতে তার নাম দাড়ায় "জিসাস ক্রিস্ট" বা যিশুখ্রিস্ট। ওদিকে রোমান কর্তৃপক্ষ যিশুখ্রিস্টের জনপ্রিয়তা দেখে বুঝতে পারে ইহুদীদের মধ্যে আবারও বিদ্রোহ ধেয়ে আসছে। ইহদী ধর্মের লোকেরাও বুঝতে পারে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে যার ফলাফল হতে পারে গোটা রাজ্যের ধ্বংস। যিশু যখন জেরুজালেম ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেয় তখন শহরের বাসিন্দারা ধরেই নেয় তাদের মাসিহা আসছে আর এমন অবস্থা দেখে সেখানের কর্তৃপক্ষ তাকে শুরুতেই গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেয়। যিশুর অনুসারী ডুডাস ইসকারায়ট তাকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করে যে এই কাজের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত মানুষ।
এখানের রাজনীতিটা বুঝতে গেলে একটু তলিয়ে দেখতে হয়। ইহুদী নেতাদের কাছে যিশুর অপরাধ ছিল ইহুদী ধর্মকে কটাক্ষ করা, তারা মনে করতেন যিশু নাস্তিক। অন্যদিকে রোমানদের কাছে যিশুর অপরাধ ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। যিশু নিজেকে মাসিহা বলে পরিচয় দিচ্ছেন, আবার মাসিহা মানে ইহুদীদের রাজা, অর্থাৎ তিনি রোমান শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। তাই যিশুর আগমন রোমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবেই ধরা হয় আর তার জন্য শাস্তি নির্ধারিত হয় তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা। ধর্মীয় নেতারা মনে করেছিলেন এখানেই ঝামেলা চুকে যাবে কিন্তু কারা ভাবে নি এই ক্রুশবিদ্ধকরণ থেকেই নতুন একটি যুগের সূচনা হতে চলেছে।