যদি পৃথিবীর সেরা এনিমে মুভি গুলো খুঁজে বের করতে চাই তার মধ্যে Spirited Away, Grave of firefies, Howl's Moving Castle সহ আরো কিছু অসাধারণ মুভির নাম উঠে আসবে। আর এই অসাধারণ মুভি গুলো নির্মাণ করে দিনের পর দিন এনিমে মুভির জগৎ সমৃদ্ধ করেছে Studio Ghibli। এই মুভি স্টুডিওর যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৫ সালের ১৫ জুন পরিচালক Hayao Miyazaki, Isao Takahata এবং প্রযোজক Toshio Suzuki র হাত ধরে টোকিও শহরে।



স্টুডিও গীবলীর নামকরণ হয় এক লিবিয়ান এরাবিক শব্দ (ghiblī) থেকে। যার অর্থ দাঁড়ায় মরুভূমির গরম বাতাস। Studio Ghibli নামকরণের পিছনে অন্যতম প্রধান ধারণা ছিলো এনিমে জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করবে এই প্রোডাকশান হাউজ। তাছাড়া ইতালীয় বিমান Caproni Ca.309 যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধবিমান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ডাকনাম হিসেবে Ghibli শব্দটি ব্যবহার হতো। শোনা যায়, পরিচালক Hayao Miazaki র বিমান প্রীতির কারণে তিনি সেখান থেকে Ghilbi শব্দটি ব্যবহার করেন।


স্টুডিও গীবলী জাপানের বহুল স্বীকৃত অ্যানিমেশান পাওয়ারহাউজের মধ্যে অন্যতম। কেবল জাপান নয় সারা বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় স্টুডিও মধ্যে নিজের জায়গা তৈরী করে নিয়েছে অসাধারণ অ্যানিমেশান মুভি গুলো দিয়ে। সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম কাজ মাথায় রেখে নিমার্ণ করা হয় অ্যানিমেশন গুলো। যা সাধারণত অন্যান্য অ্যানিমেশনে খুব কমই ব্যবহার করা হয়। পানির তরঙ্গ, মাঠে হাঁটতে থাকা চরিত্রের হুট করে পা পিছলে যাওয়া, গ্রামের পরিবেশ, এমনকি ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকও খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়। যা একটা নির্দিষ্ট সময় পর দর্শককে পুরোপুরি গল্পের মাঝে ঢুকিয়ে অনুভব করতে শেখায়। তাছাড়া কিছু মুভির ক্ষেত্রে গল্পের সাথে বাস্তবের এতো সামঞ্জস্য দেখা যায় যা সহজে যে কোনো বয়সী দর্শককে সহজে আকৃষ্ট করবে। তার সঙ্গে অদ্ভুত সুন্দর মন মাতানো মিউজিক তো থাকেই। যা শুনে গল্পের ধাঁচ সহজেই অনুভব করা যায়। সাধারণ স্টুডিও গীবলীর কাজ মানেই গতানুগতিক গল্প ধারা থেকে বেরিয়ে আলাদা ধাঁচের এক আবহ সৃষ্টি করা।


এখন পর্যন্ত ২১টি ফিচার ফিল্ম, ২টি টেলিভিশন ফিল্ম, ১টি এনিমে সিরিজ এবং ২০টি শর্টফিল্ম নিয়ে কাজ করেছে এই প্রোডাকশান হাউজ। এছাড়া আরো আরো অনেক বিখ্যাত প্রোডাকশান হাউজের সাথে সম্মিলিতভাবে অনেক কাজ তো রয়েছেই। যদিও পরিচালক Hayao Miyazaki ২০১৩ সালে হাজারো দর্শকের মনে মেঘের কালো ছায়া জমিয়ে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর প্রোডাকশন হাউজটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো প্রোডাকশন বন্ধ করে দেয়ার। ২০১৬ সালে অবসর থেকে ফেরত আসেন Hayao Miyazaki এবং ''How do you live''; নামক ফিচার ফিল্ম তৈরীর কাজ শুরু করার ঘোষণা দেন। কবে নাগাদ মুক্তি পাবে তা নিয়ে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে আশা করছি খুব শীঘ্রই মুক্তি পাবে মুভিটি এবং আবারও অসাধারণ কিছু দেখতে পাবো গীবলী প্রেমীরা।


যদিও গীবলী প্রেমীদের অনেকেই জানেন তাও বলা, স্টুডিও গীবলীর একটি মিউজিয়ামই সাজানো আছে জাপানে। যা টোকিওর Mitaka তে অবস্থিত। এই মিউজিয়ামটি স্টুডিও গীবলীর তৈরীকৃত সমস্ত মুভীর সৃষ্টিকর্ম নিয়ে সাজানো। এখানে তিনটি মিউজিয়াম আছে যার মধ্যে একটি শিশুদের জন্য। অন্য দুটির একটি প্রযুক্তি নিয়ে অন্যটি ফাইন আর্টস নিয়ে। তাছাড়া সেখানে একটি ক্যাফে, বুকস্টোর, রুফটপ গার্ডেন এবং একটি থিয়েটার আছে যেখানে স্টুডিও গীবলীর এক্সক্লুসিভ শর্টফিল্মের প্রদর্শনী হয়। এই মিউজিয়ামটি ২০০১ সালে নির্মিত হয়। যার নকশা পরিচালক Hayao Miyazaki নিজেই করেন স্টুডিও গীবলীর তৈরীকৃত মুভিসমূহের আদলে। মিউজিয়ামটি ভ্রমণ করলে সেখানে যাবার আগে যতোটুকু জানার পরিধি থাকবে তা বহু গুণে বেড়ে যাবে এই কনসেপ্ট মাথায় নিয়েই মিউজিয়ামটি বানানো। মিউজিয়ামটি ভ্রমণের জন্য আপনার গুণতে হবে ১০ ডলার। বর্তমানে প্যানডামিকের জন্য এর কার্যক্রম সীমিত। জাপান ভ্রমণে যাওয়া হলে কখনও যেতে ভুলবেন না।


পরিশেষে বলবো, যদি এখনও এই প্রোডাকশান হাউজের অসাধারণ মুভিগুলো দেখা না হয়ে থাকে এখনই লিস্ট তৈরী করে পপকর্ন হাতে দেখতে বসে পড়ুন। স্টুডিও গীবলীর ম্যাজিকাল জার্নি উপভোগ করতে করতে জানান আপনাদের গীবলী মুভির অভিজ্ঞতা।

আজ এতোটুকুই। সামনে দেখা হবে কোনো নতুন লেখা নিয়ে।

আমি নুজহাত নাওয়াল নিটোল। বর্তমানে পড়াশোনা করছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে। অবসর সময় কাটে বই পড়ে, অ্যানিমে দেখে এবং ইউকুলেলে বাজিয়ে। লেখালেখি শখের বসেই করা। আশা করছি আপনাদের পড়ে ভালো লাগবে।