ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের ভূমিকা - সাবাহ বিন হুসাইন
ফিলিস্তিনের বিগত শতাব্দীর ইতিহাস রক্তাক্ত সংগ্রামের। তাদের সেই স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামে আইরিশ, জাপানিজ ও লেবানিজদের পাশাপাশি যোগ দেয় সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের সাহসীরাও।
মার্কিন কংগ্রেস লাইব্রেরির তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামে সরাসরি অংশগ্রহন করেন। তবে তাদের সেই সাহসী সংগ্রামের খুব সামান্যই ইতিহাসের পাতায় সংরক্ষিত আছে। ইজরায়েল দখলকৃত বৈরুতের তীর ধরে ছবি তুলছিলেন বৃটিশ যুদ্ধবিষয়ক আলোকচিত্রী Chris Steele-Perkins। সেখানে হঠাৎ করেই ১ম ছবির এই বাংলাদেশি দলটার সাথে তার দেখা হয়ে যায়। যেখানে ধনী আরব/ মুসলিম রাষ্ট্রগুলো মার্কিন-ইজরায়েল জোটের সামনে দ্বিধান্বিত ছিল সেখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহন ছিল সরাসরি। শুধু সামরিক নয়, ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবা নিয়েও বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা পৌঁছে গিয়েছেন সম্মুখ সমরে।
সংগত কারনেই সামরিক তথ্য গোপন রাখা হয় এবং বাকি তথ্য ইজরায়েলের বিমান হামলায় বৈরুতে ধ্বংস হয়ে যায়। তবে ফাত্তাহ্ এর লেবাননের PLO সেক্রেটারি ফাত্হি আবু আল-আরাদাত্ তার স্মৃতি থেকে জানান প্রায় দেড় হাজারের মত বাংলাদেশি সৈনিকের ব্যপারে তিনি নিজেই জানতেন এবং এমন অনেক ব্যাটালিয়ন ছিল যেগুলো সম্পূর্ণ বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত হত। তারা তাদের দুঃস্বাহসিকতার জন্য অন্য স্বাধীনতা যোদ্ধাদের মধ্যে খ্যাত ছিলেন।
আরব- ইজরায়েল যুদ্ধে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি যুদ্ধবন্দী হন এবং সেখানে সীমাহীন নির্যাতনের স্বীকার হন। তবে শত নির্যাতনেও তারা মুখ খোলেননি। আবু আল-আরাদাত্ এর ভাষায় এই বাংলাদেশি যোদ্ধারা স্বাধীনতার এই মন্ত্রকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করেছিলেন পূর্ণরূপে।
ফাত্তাহ্ গ্রুপের জেনারেল কমান্ড এ বাংলাদেশি যোদ্ধাদের সবথেকে বেশি অংশগ্রহন ছিল। তারা সরাসরি সমরে অংশ নিয়েছেন আবার প্রয়োজনে রসদ সরবরাহের কাজেও অংশ নিয়েছেন। জেনারেল কমান্ডের সে সময়কার নেতা জিয়াদ হাম্মো বলেন যে তিনি তিন-চারজন বাংলাদেশি যোদ্ধাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনতেন। তারা বেকা এবং বাবলেক এ নিরাপত্তার দায়ীত্ব পালন করতেন। তাদের আরবী এত চমৎকার ছিল যে তাদের বাঙালি বলে চেনাই দুষ্কর ছিল।
ফাত্তাহ্ এর হয়ে বাংলাদেশিরা সরাসরি সমরে কম অংশ নিয়েছিলেন জাপান ও আইরিশ যোদ্ধাদের তুলনায়। তবে ৭০ এর দশকের দফায় দফায় হওয়া যুদ্ধে বাংলাদেশি যোদ্ধারা সিরিয়ান- ইরাকি- লেবানিজদের সাথে সমান তেজে যুদ্ধ করেছেন এবং শহীদ হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ যুদ্ধবন্দী হয়েছেন এবং পরবর্তীতে মুক্তি পেয়ে লেবাননে থিতু হয়ে গিয়েছেন বাকি জীবনের জন্য। সেই সাহসী শহীদদের কারও কারও কবর দেখতে পাবেন লেবাননের শাতিলা ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরের পাশে।
অসংখ্য শহীদদের পাশে সেখানে এক বীর বাংলাদেশির স্মৃতিফলক, তিনি কামাল মুস্তফা আলী।১৯৮২ সালের ২২ জুলাই গুরুত্বপূর্ণ বেওফোর্ড দূর্গ বা ক্যাসল অফ হাই রক পুনর্দখলের চেষ্টা চলার সময় আরও অনেকের সাথে তিনি শহীদ হন।
২২ বছর শত্রুর ভূমিতে শায়িত থাকা এই বীরের মরদেহ জার্মানির মধ্যস্ততায় প্রথমে লেবানন এবং পরে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। ২০০৪ সালে তার নামের কবরফলক শাতিলা কবরস্থানে অন্য শহীদদের সাথে স্থান পায়। শরণার্থীরা পরম মমতায় অন্য শহীদদের মত অচেনা এই বীরের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে যান তার ফলকের রক্ষণাবেক্ষণের মধ্য দিয়ে।