সূর্যটা তখনো হেলে পরেনি- তবে দিগন্ত রেখার খুব কাছে। সবুজ ঘাসের ওপারে বেলাশেষে গোধুলির আলোর খেলা চলছে। আলোর খেলা আমার লাছে অতিশয় প্রিয়। আমি প্রতিবার আলো ধরতে গেলেই ওরা সরে যায়। পানিতে মিশে যায়। কূলে ঢেউ খেলতে খেলতে ওরা নিরব হয়। আমি আবার ছুঁতে যাই। ওরা আবার ঢেউয়ের মাঝে মিশে যায়। আমার ধারনা, ওদের সিক্স সেন্স মারাত্মক প্রখর। তা না হলে বুঝে ফেলে কি করে?

আমি নির্জীব চেয়ে রই। পদ্মফুলে আঁকা গল্পের সুবাস আমায় আকৃষ্ট করে। জীর্ণশীর্ণ আলখেল্লায় আমি দিঘীর পাড়ে বসি। এক সময়ে অবনীতা রোজ বিকেলে এখানে আসতো। জলে পা দুলিয়ে গল্প করতো। এখন আর আসেনা। সেই যে সাদা কাপড়ে নিজেকে জড়িয়ে বিদায় নিলো! বৈশাখী মেলায় নীল শাড়িটা শেষ পরেছিলো। শহর থেকে এনেছিলাম। অবনীতার শখ ছিলো নীল শাড়ি। আমাকে হলুদ পানজাবী পরতে হবে বলে কি যে বাহানা ধরেছিলো, আমার মনে পরে।

সেই দিঘীর ধারে আমি রোজ আসি। অবনীতা আসে না। চোখ বন্ধ করলে দেখি সাদা শাড়ির আঁচল উড়িয়ে একজন আসে। আমাকে ছুঁয়ে দেয়। আমি ছুঁতে পারিনা। মিলিয়ে যায় কোথায় যেনো। আমি ছবি আঁকি। সাদা অবয়বের ছবি। অদ্ভুতভাবে ছবিটা অবনীতার সাথে মিলে যায়। সমীকরনটা অকাট্য হয়ে পরে। আমি আরেকবার চোখ বন্ধ করি।

সাদা শাড়ির অবয়বটা আমায় জিজ্ঞেস করে,

- কে গো তুমি শিল্পী? কি যাদু আছে তোমার ঐ হাতে?

আমি চোখ মেলে তাকাই। কেউ নেই। চারদিকে ধূসর। উপরে খোলা আকাশ। উত্তরে হাওয়ায় হালকা ঠান্ডা অনুভব করি। আমি মুচকি হেসে জবাব দেই,

- এ যে শুধুই কল্পনার রং। আমার কল্পকথা!   


 

মোঃ খশরু
লেখকের কথা: সময়ে অসময়ে পৃথিবীর বিচিত্রতা আমাকে বেশ বেখেয়ালি করে তোলে । রহস্যের গল্প কথা কিম্বা হাজার বছরের কল্পকথা - আমায় উদাসীন করে রোজ । ভোরে কিম্বা নিকশ কালো সন্ধ্যায় , আমি পৃথিবীর বিচিত্রতায় মুগ্ধ হই !