জানুয়ারির ধূসর বিকেলে গোধূলির ম্লান আলোতে,হঠাৎ কেমন যেন সদ্য ফসল কাটা শেষ হয়ে যাওয়া ক্ষেতের মত খা খা লাগে।বন্যা হলে সবহারানো গৃহস্থেরা যেমন বোবা হয়ে যায়,আমি তেমনি অপলক পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যটার দিকে তাকিয়ে থাকি।
সূচিপত্রহীন কবিতার বই আনমনে হাতের ধাক্কায় বন্ধ হয়ে যায়।নিদারুণ অসহায় লাগে।চোখের সামনে হঠাৎ এসে দাঁড়ায় মহাকাল,দুঃখ।

ক্রমশ রোদ আরো পশ্চিমে হেলে যায়।শুকনো কুয়াশা ঘেরা উত্তরের বাতাসে ঝরে গেছে যেসব পাতারা তাদের দিকে তাকিয়ে খেয়াল হয়,"গেছে।গাছগুলোর এই শীতে সম্পূর্ণটা গেছে।"

কে যেন নিঃসঙ্গতার কপাট খোলার জন্য অবিরাম দরজায় আঘাত হানে।
"প্রেরকের ঠিকানাবিহীন চিঠি পাঠাব কাউকে?", প্রশ্নটা ক্রমশ কুণ্ডলী পাকিয়ে অশ্বত্থের শেকড়ের মত জড়িয়ে ধরে মস্তিষ্ককে।

--"এসো লেনদেন করি", শুণ্য বাবলা গাছটা বলে ওঠে।
--"কিন্তু কীসের?"
--"ধ্বংসের সঙ্গে প্রেমের।ঈর্ষার সঙ্গে ক্ষমার।জীবনের সঙ্গে মহাজীবনের।"
ক্রমশ সন্ধ্যা নামে।চাপা অন্ধকারকে কীরকম গাঢ় করে দিয়ে যায় কৃষ্ণপক্ষ।
কয়েকজন ঘুন ধরে যাওয়া কাঠ জমা করে।দেয়াশলাই জ্বেলে তাতে আগুন ধরায়।বাবলা গাছটা আনমনে হাসে।আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,

---"যে দেয়াশলাই শুকনো কাঠে আগুন ধরায় সে নিজেও কী একই অগ্নিকুণ্ডে একলা পুড়ে মরে না?"

বিক্ষিপ্ত আকাশের রঙগুলোকে অথৈ সাগর বলে ভ্রম হয়।
"ওই দেখো নদী।এইভাবে জীবনের নদী কতশত শবদেহ ভাসিয়ে নিয়ে যায়।দেখো তাকিয়ে।", গাছটা ডাল তুলে দেখায়।
অথচ নদীর পানিও তো একসময় সরে যায়।চর জেগে ওঠে।কিন্তু মগজের ভোঁতা ব্যাথাটা সরে না কখনো।
--"ওরা কারা?", আমি হাত তুলে জিজ্ঞাসা করি।" ওই যে ওপাশের ডালে বসে হাসছে?"
--"দুর্ভিক্ষ,মহামারীতে কেবল শকুনের চোখেই আনন্দ খেলা করে।ওরা শকুন।ওদিকে তাকিও না।"

আমি ক্রমশ বেশি করে তাকাই।চোখ ফেরাতে পারি না।শিল্পীর আঁকার মত ত্রুটিহীন তাদের চোখ।
স্রোডিঞ্জারের বিড়াল
আমি স্রোডিঞ্জারের বিড়াল হয়ে বন্দি আছি বাক্সে,পটাশিয়াম সায়ানাইডের সাথে।