সাহিত্য সন্দর্শন আয়োজিত- ২য় সাহিত্য উৎসব ''ধ্রুপদ''- এর গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় সিনিয়র ক্যাটেগরীতে ১ম পুরস্কার বিজয়ী গল্প, "অপ্রাপ্তিতেই সমাপ্তি", লিখেছেন- যারান ঐশী 


অপ্রাপ্তিতেই সমাপ্তি

 
আবির পিছন হতে আরিশার পিঠে ছুরি ঢুকিয়ে দিল।
আরিশাঃ আহ!!!!!!!!!!!!!!
আরিশা নিজেকে ছাড়ানোর বারবার চেষ্টা করছে কিন্তু আবির আরো শক্ত করে ধরে আছে। সাথে সাথে আবার ছুরি ঢুকিয়ে দেয়।
আরিশা অশ্রুসিক্ত চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে যায়। প্রতিশোধের জন্য লোকটা!!!!
আবিরঃ জানি চোরের মতো কাজ করলাম কিন্তু সামনে করার সাহস হচ্ছিল না। আমি হারবো না আর না হারবে আমার ভালোবাসা বলেই.....নিজেই নিজের রক্তাক্ত ছুরি পেটে বসিয়ে দিল।



৩দিন আগেঃ 


হঠাৎ বোধশক্তি অনুভব করে আরিশা, হাত-পা নাড়াতে পারছে না। চোখে ভীষণ অন্ধকার, মুখ বাঁধা। মাথা ভার ভার লাগছে বুঝতে পারছে না কি হয়েছে তার সাথে। প্রচুর ক্লান্ত থাকায় আবার ঘুমিয়ে যায় আরিশা, হয়তো ওষুধের রেশ এখনো কাটেনি।
আচমকা পানির ছিটায় ঘুম কেটে যায় আরিশার, চোখের সামনে ঘুটঘুটে অন্ধকার তবে কোনো ছায়ামানবের উপস্থিতি আন্দাজ করা যাচ্ছে। মুখ বন্ধ থাকার কারণে চিৎকার করতে পারলো না সে। ধীরগতিতে ছায়ামানবটি সড়ে গেলে পাশে থেকে, তীক্ষ্ম আলোর শিখা দেখতে পেল। আরিশা চটজলদি নজর দিল সেদিকে, ছায়ামানবটি মোম জ্বালিয়েছে, আধার-আলোয় নিজের অবস্থান বিবেচনা করতে পারছে। কিন্তু আফসোস মানবের মুখোদশর্ন করার সৌভাগ্য হলোনা, তবে ছায়া দেখে আন্দাজ করা যায় সুঠাম দেহের অধিকারী।

আরিশাঃ উমম......উমম........!!
মানবঃ কি হয়েছে?
আরিশাঃ উমম....(ছটফট করছে, মুখ খোলার জন্য)
মানবঃ মুখ খুলতে পারবো না।

আরিশা হতাশ হলো। সে এমন উত্তর আশা করেনি তবুও আরেকবার ব্যর্থ চেষ্টা করল মায়াভরা নজরে তাকিয়ে। এত্ত মনোমুগ্ধকর মায়াভরা দৃষ্টি এড়াতে পারলো না।

আরিশাঃ কে আপনি? আমি এখানে কেন? কেন এনেছেন এখানে আমাকে? চুপ করে আছেন কেনো উত্তর দিন।
সে(মানব): উত্তর দেওয়ার সময় দিলে তো দিব? আমি কে এটা ম্যাটার করে না আর তোমার ফালতু প্রশ্নের উওর দিতে আমি বাধ্য না, কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখো আমার থেকে মুক্তি নেই তোমার। গোট ইট?
আরিশাঃ ফালতু প্রশ্ন?

আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মুখ বেধে দিল আরিশার, সাথে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে দিল যার কারনে পুনরায় ঘুমের সাগরে পাড়ি দিল আরিশা।
মিষ্টি রোদের আলোয় ঘুম ভাঙ্গলো আরিশার, প্রতিদিনের অভ্যাস মতো আজও আড়মোড়া দিতে গিয়ে হাতে ব্যাথা অনুভব করায় মনে পরে যায় কাল রাতের কথা। কিন্তু আমার মুখ না বাঁধা ছিল? খুলে গেলো কি করে? যাজ্ঞে চারপাশে লক্ষ্য করে দেখে কুড়ে ঘরে আছে সে, তবে বেশ পরিপাটি। ঘরের কর্নারে চোখ পড়তেই আত্মা কেপেঁ উঠলো, বিশাল বিশাল ধারালো অস্ত্রে ভরা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রফেশনাল কিলার বাট আমাকে কেনো?? মারতে চায় নাকি আবার আমাকে? আমি কি করেছি আল্লাহ? কিছুক্ষন চিৎকার চেচামেচি করেও লাভ হয়নি মনে হয় সে ছাড়া এইখানে আর কোনো কাকপক্ষীও নেই।
আরিশা আর পারছে না নিজের মস্তিষ্কে চাপ দিতে কিছুতেই ভেবে পারছে কি করতে পারে ও। রোদের তাপ বাড়ছে মনে হচ্ছে বেলা বয়ে যাচ্ছে কিন্তু আরিশার সময় যেনো কাটচ্ছে না, থেমে গেছে!
থমথমে দুপুরবেলা সেই অচেনা ছায়ামানবটি ঘরে প্রবেশ করলো মুখ আড়াল করে। সাথে সাথে আরিশা মুখে ঘুরিয়ে নেয় হয়তো ঘৃনায়! লোকটা একটা খাবারের প্যাকেট সামনে ধরলো যা দেখে তার শরীর রাগে গজগজ করতে লাগলো।

আরিশাঃ ব্যাটা হাত-পা বেঁধে সামনে খাবার ধরস?আক্কেল নাই নাকি। যাকে মারতে নিয়ে আসছে তার জন্য আবার খাবার এনেছে কি প্রমাণ করতে চাস তুই খুব মহান? (মনে মনে)

লোকটা আরিশার চাহনি দেখে বুঝতে পারলো তার বোকামি, তখন হাতের বাধঁন খুলতে খুলতে বললো খুলে দিলাম জাস্ট খাবার খাওয়ার জন্য চালাকির চেষ্টাও করতে যাবে না।
সেই সুযোগে আরিশা লোকটার মুখে লাগানো রুমাল টান দিয়ে খুলে ফেললো। মুখোশের আড়ালে যাকে আবিষ্কার করলো তাকে সে কল্পনায়ও ভাবেনি।

আরিশাঃ আপনি!!!!!!!!!!!!!! আবির আপনি???????? এটা কি করে সম্ভব????? আপনি এমন কাজ? আমাকে কিডনাপ??? উত্তর দিচ্ছেন না কেন??????????

(জি হ্যাঁ যেই লোকটা আরিশাকে কিডনাপ করেছে তার নাম আবির। আরিশার কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা পুর্বপরিচিত? পুরোটা পরলেই বুঝতে পারবেন কাহিনি কি আমি কিছু বলবো না, বলে দিলে যদি আবির আমাকেও গুম করে ফেলে? যাই আমি আপনারা মন দিয়ে পরবেন)

আবিরঃ হ্যাঁ আমি!! (কিছুক্ষণ চুপ থেকে উওর দিল)
আরিশাঃ কিন্তু কেনো??????
আবিরঃ কারণ তুমি দোষী, অপরাধী।
আরিশাঃ কি দোষ করেছি আমি? কি আমার অপরাধ?
আবিরঃ সব জেনে বুঝে না বুঝার ভান করো না।
আরিশাঃ বুঝতে পারলে জানতে চাইতাম না কখনোই। কেন এনেছেন আমাকে এখানে?
আবিরঃ তোমার অপরাধের শাস্তি দেওয়ার জন্য।
আরিশাঃ অপরাধই যখন করিনি তখন কিসের শাস্তি?!
আবিরঃ চুপ আরিশা চুপ আর অভিনয় করতে হবে না আমি জানি সবটা। তোমার যোগ্য শাস্তি শুধু মৃত্যু।
আরিশাঃ আপনি খুন করতে এনেছেন এখানে আমাকে? (অবাক হয়ে)

আরিশার প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই আবির চলে গেল। হতাশাগ্রস্ত আরিশা দীর্ঘ শাস্ব ত্যাগ করে অতীতে হারিয়ে গেল যেখান থেকে আবির সাথে তার পরিচয়।    
 



এক মাস আগেঃ (আরিশার দৃষ্টিকোণ)


হাইওয়েতে মনের আনন্দে ড্রাইভ করছে আরিশা আজকের দিনটা তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তার ফাউন্ডেশনে একজন বিজনেসম্যান অনেক বড় এমাউন্ট ডোনাট করবে, এই টাকা দিয়ে কত গরিবের পেটে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান হবে এসব ভাবতে ভাবতে কষে ব্রেক মারলো।সামনে প্রচন্ড ভীড় কিন্তু কি হয়েছে এখানে? গাড়ি থেকে নেমে সামনে যেতেই দেখে কার এক্সিডেন্ট হয়েছে আর ডোর লক হওয়ায় কেউ বের করতে পারছে না তাকে। এদিকে আরিশার দেরি হয়ে যাচ্ছে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। একটা মানুষের জীবন আগে তাই আরিশা চটজলদি একটা কাঠ জোগাড় করে গাড়ির জানালা ভাঙ্গল। তারপর গাড়ির ভেতর হাত দিয়ে লক খুলে লোকটিকে বের করে কাছের সিটি হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করায়। মাঝে তার ফ্রেন্ড ফোন করে জানায় বিজনেস ম্যান আজকে আসবে না শুনে মেজাজ বিগড়ে গেলেও পরে ভাবলাম যাক ভাল আমিও এখানে আটকে গেছি।
অপারেশন শেষে ডাক্তার জানায় সে এখন বিপদমুক্ত চাইলে দেখা করতে পারি। ভেতরে গেলাম দেখা করতে কোন মানুষ এত্ত কেয়ারলেস ভাবে ড্রাইভ করে দেখতে হবে না?

আরিশাঃ আসসালামু আলাইকুম আমি আরিশা। এখন কেমন লাগছে আপনার?
আবিরঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম, আমি আবির। জ্বি এখন বেটার ফিল হচ্ছে এন্ড ধন্যবাদ।  
আরিশাঃ ধন্যবাদ দিয়ে হবে না শুধু কেয়ারফুল্লি ড্রাইভ করলেই হবে। (হালকা হেসে)
আবিরঃ আরিশার কথা শুনে আবিরও হেসে দিল।

দু'জনে আরো কিছুক্ষণ গল্প করে আরিশা বিদায় নিল।আরিশা বিদায় নিলেও আরিশার ফেলে যাওয়া কিছু মুহুর্ত আবির ভুলতেই পারছে না এই প্রথম কারো জন্য মন উথাল পাথাল করছে। পরদিন আরিশা আবার হসপিটালে আবিরকে দেখতে গেলও পায়নি সে চলে গেছে।
 
২দিন পরেঃ

আজ আরিশা সাদা সালওয়ার কামিজ পরেছে, অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আজ আবার হাইওয়ে পার হয়ে ভানুপুর গ্রামে যাবে (ঐখানে আরিশার তৈরি এতিমখানা আছে)। আজকে সেদিনের মিস হয়ে যাওয়া ডিলটা ফাইনাল করবে। সেখানে পৌছেঁ আগে বাচ্চাদের সাথে দেখা করে, সপ্তাহে একদিন এখানে এসে সময় কাটায়।

বাচ্চাদের সাথে গল্প করছিল হঠাৎ সিম্মি (আরিশার ফ্রেন্ড) এসে ডাক দেয়।
সিম্মিঃ আরিশা চল চল তারা এসে পরেছে।
আরিশাঃ চল চল। আরে তুইও আজকে সাদা? বাহ দারুন লাগছে তোকে।
সিম্মিঃ হইসে এখন চল।

চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিজ আসবে তাই ছোটখাটো একটা পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। চৌধুরীকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগতম জানানোর সময় আরিশা ধাক্কা খায়।

আরিশাঃ আপনি? আপনি আবির চৌধুরী?
আবিরঃ জ্বি মিস আরিশা আহমদ আমি আবির চৌধুরী।
মুচকি হেসে বসতে বলে আরিশা মঞ্চে গেল। এরপর সংক্ষেপে অনুষ্ঠান শেষ করা হলো। তখন আরিশার ফোন এলো তার মা হসপিটালে, তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেল আরিশা পিছে পিছে সিম্মিও যায়। সেদিনের পরে আবিরের সাথে আর তার দেখা হয়নি তাহলে কিসের শাস্তি দিবে সে আমাকে? কি করেছি আমি তার সাথে?



পানির ছিটায় নিজের ভাবনা জগৎ হতে বেরিয়ে এল আরিশা। সামনে আবির দাঁড়িয়ে.....

আবিরঃ কি দেখছো?
আরিশাঃ দেখছিনা ভাবছি এত ভালো মানুষির আড়ালে কতটা ভয়ংকর আপনি সাথে অনেকটা নীচও।
আবিরঃ হাহাহা(অট্ট হাসিতে মেতে উঠলো)।
আরিশাঃ আমি জানতে চাই কি কারণে মারতে চান আপনি আমাকে।
আবিরঃ বলবো না।
আরিশাঃ কেন বলবেন না আমার জানার রাইটস আছে।
আবিরঃ না নেই।
আরিশাঃ ওহ আপনার জীবন বাচাঁনোর এই প্রতিদান দিচ্ছেন আমাকে?
আবিরঃ খুনের দায়ে। (হাসি থামিয়ে গম্ভীর ভাবে উত্তর দিল)
আরিশাঃ কি?????? আপনার মাথা ঠিক আছে? কি আবোলতাবোল বকছেন আপনি? (চিৎকার করে)
আবিরঃ চিৎকার করলেই তোমার সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যাবে না।
আরিশাঃ কিসের সত্যি, কোন সত্যি আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
আবিরঃ কোনো ভুল হচ্ছে না আমার। (চিৎকার দিয়ে)
আরিশাঃ ঠিকাছে আপনি ঠিক যখন তখন মেনে নিলাম আপনার কথা, উপরওয়ালা আছে।
আবিরঃ না মেনে যাবেই বা কই আর কি যেন বলছিলে? প্রতিদান রাইট? প্রতিদান হিসাবে তোমাকে দুইদিন বাচিয়ে রেখেছি।
আরিশাঃ চাই না আজই শেষ করুন আমাকে বলতে বলতেই আরিশা নিস্তেজ হয়ে গেল। কারন আবির খাবারে ঘুমের মেডিসিন মিশিয়েছিল।

হাটু গেড়ে আরিশার সামনে বসলো আবির।
কি মায়াবি মুখ অথচ এই মুখের আড়ালে এত জঘন্য মানুষ থাকতে পারে কল্পনার বাইরে। আরিশার দিকে তাকিয়ে মনের অজান্তেই কপালে চুমু একে দিল। তারপর কোলে মাথা রেখে বলতে লাগলো কেন আরিশা? কেন করলে এমন? কেন নাম লিখালে তাদের তালিকায়? নিজ ভাবনার সাগরে তলিয়ে গেল আবির।


(১মাস আগে আবির ও আরিশার শেষ সাক্ষাৎ আপনারা সবাই জানেন তবে সেটা আরিশার দৃষ্টিকোন থেকে এখন আবিরের দৃষ্টিকোন থেকে পরের অংশ জানবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে গিয়ে দেখে আসি আবিরের মনের মধ্যে লুকায়িত স্মৃতি?)  



খাওয়া দাওয়ার পরে আবির আরিশাকে খুঁজে পেল না। সার্ভেন্টের কাছে জানতে পারলো আরিশা কিছুক্ষণ আগে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে হাইওয়ের দিকে গেছে। আবির ভাবে হাইওয়েতে গিয়েই মিট করবে আর সাথে তিন্নিকেও (আবিরের ছোট বোন) পিক করবে। যেই ভাবা সেই কাজ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে। রতিম মিয়ার দোকানে তিন্নিকে রেখে গিয়েছিল তিন্নির অসুস্থ বোধ করছিল তাই। যদিও রেখে যেতে চায়নি তিন্নির জোরাজোরিতে যেতে হয়েছিল। গাড়ি সাইড করে নামতে হবে দোকান অপর পাশে। সাইড করে নেমে দাঁড়ায় রাস্তা পার হতে হবে। এদিকে তিন্নি বড়ভাইকে আসতে দেখে দেরি সহ্য না করে নিজেই রাস্তা পাড়ি দেয়, একটা গাড়ি তিন্নির দিকে ধেয়েঁ আসছে দেখে আবির চিৎকার করে তিন্নিকে থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু..............ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছিল তিন্নিকে পিষে গাড়িটি চলে যায় একটু থামেওনি।

আবির দৌড়ে তিন্নির কাছে গেল অনেক বার ডাকলো বাট তিন্নির কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আবির চোখ বন্ধ করে ফেলে কারন ও যা দেখেছে তা মেনে নিতে পারছে না। গাড়িতে সাদা সালওয়ার কামিজ পরিহিতা একজন ছিল তার প্রতিচ্ছবি আরিশার রুপ বয়ান করছে।
তবুও সে মানতে নারাজ, মন মানতে নারাজ মেয়েটি আরিশা নয়। পাশে থেকে একজন ভদ্রলোক জানালেন তিনি গাড়ির নাম্বার নোট করেছেন। নাম্বারটি আমার এসিস্ট্যান্টকে দিয়ে মালিকের খবর নিতে বললাম। মাগরিবের দিকে তিন্নির দাফনের কাজ সম্পুর্ন করলাম।রাত ৮ নাগাদ এসিস্ট্যান্ট ফোন দিয়ে যার কথা বলেছে তাতে পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেল, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। হ্যাঁ গাড়ির মালিক আরিশা আহমেদ। পরমুহূর্তেই প্রচন্ড রাগে রক্তচক্ষু নিয়ে আয়নায় ঘুষি মারে হাত কেটে রক্ত গলগল করে পরতে শুরু করছে। ভাঙ্গা আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছে আর বলছে কেউ ছাড় পাবে না যারা এই অন্যায় করেছে তারা শাস্তি পেয়েছে তুমিও পাবে মিস আরিশা। বহু বছর আগে আমি আমার মাকে হারিয়েছি আজ তোমার কারনে আমি আমার বেচেঁ থাকার শেষ সম্বল আমার কলিজার টুকরাকে হারিয়েছি তুমিও ছাড় পাবে না। তোমার যোগ্য শাস্তি আমি দিব।
 
সেদিন থেকে গতকাল পর্যন্ত আবির শুধু আরিশাকে ফাদেঁ ফালানোর চেস্টায় ছিল। অবশেষে দীর্ঘ পরিকল্পনার পরে গতকাল সার্থক হয়েছে।


(কিন্তু আবির কি পারবে আরিশাকে শাস্তি দিতে বন্ধুরা? নাকি নিজের অনুভতির মায়াজালে আটকে যাবে? আচ্ছা আবির যেই সত্যি জানে তা কি আদোও সত্য? )


রাত পেরিয়ে ভোর, ভোরের তীক্ষ্ণ আলো আরিশার চোখ স্পর্শ করায় জাগ্রত হয় সে। আবিরকে নিজের কোলে আবিষ্কার করে, ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। হঠাৎ টনক নড়ে আরিশার তার হাতের বাধন খোলা!!!! এই সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে। অতি সাবধানতার সাথে আবিরকে নিচে শুইয়ে দেয় এবং সেও ধীর পায়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। গভীর জঙ্গলে ছিল এতদিন সে? কোথায় যাবে কোনদিকে রাস্তা?মাথা কাজ করছে না কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। প্রায় ২০মিনিট ধরে হেটেঁই যাচ্ছে কিন্তু কোনো দিক দিশা খুঁজে পেল না আরিশা। আরও কিছুদুর যাওয়ার পরে হাইওয়ে সাইড দেখে সাহায্য চাইবার জন্য যেই চিৎকার করতে যাবে তখন পিছন থেকে মুখ আটকে টেনে নিয়ে আসে ওকে।
আরিশাকে টেনে নদীর কিনারে নিয়ে এসে বলতে লাগল
আবিরঃ তুমি কি মনে করেছো তুমি আমার থেকে পালাতে পারবে? না মিস না। চল (আরিশাকে টানতে টানতে)
আরিশাঃ ছাড়ুন আমাকে আমি যাবো না আপনার সাথে ছাড়ুন। হেল্প!!!! হেল্প!!!!
আবিরঃ চুপ একদম চুপ(আরিশার মুখ চেপেঁ ধরে)
(আবির আরিশার চোখে হারিয়ে যাচ্ছে।)
আবিরঃ চোখে এত নেশা কেন তোমার?
আরিশাঃ কি বললেন???
আবিরঃ নাহ কিছু না। শুনো।
আরিশাঃ না আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।
আবিরঃ বাধ্য তুমি।
আরিশাঃ (চুপ)
আবিরঃ আরিশা বিয়ে করবে আমাকে?
আরিশাঃ কি???????
আবিরঃ হ্যাঁ করবে?
আরিশাঃ যাকে কিছুক্ষণ পরে মেরে ফেলবেন তাকে প্রপোজ করছেন? কেমন মানুষ আপনি?
আবিরঃ আমি কেমন তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
আরিশাঃ জীবনেও না আমি একজন মাডারারকে বিয়ে তো দূরে থাক এক সেকেন্ড এর জন্যও সহ্য করবো না এর থেকে মরে যাওয়া বেটার।
আবিরঃ হ্যাঁ আমি মাডারার। আমি শাস্তি দিয়েই যাবো তাদের।
আরিশাঃ কাদের?
আবিরঃ যারা হাইওয়েতে যাওয়ার সময়ে বেখায়ালে গাড়ি চালিয়ে অন্যদের জীবন কেড়ে নেয় তাদের।
আরিশাঃ আপনি এই পর্যন্ত কতজনকে!!!???
আবিরঃ ২৩ জন!!
আরিশাঃ এর জন্য পুলিশ আছে আইন আছে আপনার কোনো!....
আবিরঃ আইন??? হাহাহা কতজনকে শাস্তি দিয়েছে তোমার আইন? কাউকে ধরতে পারেনি কিন্তু আমি খুজেঁছি সেই সাথে শাস্তিও দিয়েছি।
আরিশাঃ আমাকে কেন? আমি কাউকে!
আবিরঃ চুপ তোমার কারনে আমি আমার তিন্নিকে হারিয়েছি।
আরিশাঃ আমার কারণে মানে? আমি কি করেছি।
আবিরঃ আমি সেদিন স্পষ্ট দেখেছি তোমাকে ড্রাইভ করতে।
আবিরঃ ইভেন একটাবার পিছনে ফিরে পর্যন্ত তাকাওনি।

আরিশা চুপ করে ভাবছে যে, আমি সেদিন ড্রাইভ করেছি কিন্তু আমার যতদূর মনে পরে আমার গাড়ির সাথে কারো ধাক্কা লাগেনি বা আমি কারো উপর দিয়ে গাড়ি উঠিয়ে দেইনি। তাহলে কি সেদিনের টেনশনে বা তাড়াহুড়োতে আমি এমন কাজ করেছিলাম? যা আমার মনে নেই বা হয়তো খেয়াল করিনি? আমার অজান্তে যদি এত বড় পাপ হয়ে থাকে তাহলে আবির যা করার করবে আমি মাথা পেতে নিবো।

আবিরঃ চুপ করে আছো কেন? সত্যিটা ধরা পরে গেল তাইনা? কি ভেবেছিলে পার পেয়ে যাবে? নাহ পাবে না। তবে একটা কথা কি জানো? আমি একদম চাইনি আমার মনের কথা তুমি জানো কিন্তু কি করার মন তো মনই। কথায় বলে 'মন শোনে না মানা' ঠিক বলে লোকে। প্রথম দেখাতেই তোমার প্রেমে পরেছি, জানো আরিশা আমি না চাইতেও তোমার প্রেমে এখনো পরেই আছি। তুমি খুনী তাও তোমাকে ভালোবাসি তোমাকেই লাগবে আমার।

আরিশা কিছু বলার ভাষা খুজেঁ পাচ্ছে না আর বলবেই বা কি সে  নিজেও ঠিক করে জানে না সে অন্যায়টা করেছে নাকি।
আবিরঃ বিয়ে করবে আমায়?
আরিশা অবাক হয়ে উওর দিল অসম্ভব!!!
আবিরঃ হুম......অসম্ভব!!  

আরিশা নিরব ক্লান্তমিশ্র চাহনিতে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। হয়তো মনে মনে হিসেব কোষছে। যদি কোনো হিসেব মিলাতে পারতো তাহলে বড্ড ভালো হতো। মিনিটে দশেক পরে আচমকা আবির আরিশাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করায় আরিশা বেশ বড়সড় ধাক্কা খায় তবুও চুপ থেকে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করল। আবির আলতো হাতে আরিশার চুল কানের পিঠে গুজে ফিসফিস করে বললো

আবিরঃ আজ তোমাকে বড্ড মায়াবী লাগছে গো মায়াবতী।
আরিশার মধ্য দিয়ে এক অজানা শিহরণ বয়ে গেল। কানের মধ্যে শুধু একটি শব্দের আনাগোনা "মায়াবতী"। এত মিষ্টি করে কেউ তাকে আগে ডেকেছে কিনা তা তার মনে পড়ছে না।
আকাশ প্রচন্ড মেঘলারূপ ধারণ করেছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সেই সাথে হালকা মৃদু বাতাস। আবির আরিশাকে আরো শক্ত করে ধরলো যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। হঠাৎ আবির পিছন হতে আরিশার পিঠে ছুরি ঢুকিয়ে দিল!

আরিশাঃ আহ!!!!!!!!!
আরিশা নিজেকে ছাড়ানোর বার বার চেষ্টা করছে কিন্তু আবির শক্ত করে ধরে আছে। সাথে সাথে আরেকবার ছুড়ি বসিয়ে দিল, এইবার সে আরিশাকে ছেড়ে দিল। আরিশা অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে আবিরের দিকে তাকালো, আবির অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। টাল সামলাতে না পেরে পরে বসে পরলো আরিশা। ছুড়ির আঘাত যতটা না ঘায়েল করছে তার থেকে বেশি আহত হচ্ছে আবিরের চুপ থাকা দেখে। ব্যাথায় কুকরাচ্ছে আরিশা আর আবির আকাশপানে চেয়ে চিৎকার করে বলছে....

আবিরঃ আমি পেরেছি! আমি পেরেছি তিন্নি।ভালোবাসায় কাবু হইনি আমি, শাস্তি দিয়েছি আমি তিন্নি।আমি পেরেছিইইইইইইইই।
এবার আবির আরিশার দিকে তাকিয়ে বললো
আবিরঃ জানি চোরের মতো কাজ করলাম কিন্তু সামনে করার সাহস হচ্ছিল না। তাই বলে ভেবো না আমি ভালোবাসায় হেরে গেছি, আমি হারবো না আমার ভালোবাসাও হারবে না। খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার আরিশা?
আরিশার কাছে আবির যেতে নিলে হাতের ইশারায় নিষেধ করে।
আবিরঃ হুম কাছে যাওয়া বারন!
এই কথা বলেই রক্তাক্ত ছুড়ি নিজেই নিজের পেটে বসিয়ে দিল।
আরিশাঃ আবির!!!!!!!!!!!!!
আবার একই কাজ করলো আবির পরপর ৫বার!
আরিশা এবার থেমে থাকতে না পেরে উঠে আবিরের কাছে যাওয়ার জন্য অনেক কষ্টে দাঁড়ায় কিন্তু এগোতে পারলো না আর ধাপ করে মাটিতে বসে পরলো পেট ধরে কারণ আবির ছুরিটি আবার আরিশার পেট বরাবর ফিকে মেরেছে।
আবিরঃ আমি আমার ভালোবাসাকে হারতে দেইনি। কাছে আসা বারন তাই দূর থেকেই ভালোবাসব তোমায় মায়াবতী।
আরিশা ভাবছে কতটা ভালোবাসলে মানুষ এমন করতে পারে!!! এত ভালোবাসা আমার কপালে থেকেও ছিল না? সব ভালোবাসা কপালে থাকে না কিন্তু শেষটা এমন না হলেও পারতো! নয় কি?

আবির আর না পেরে লুটিয়ে পরলো নদীর কিনারায়। আরিশা টেনে টেনে আবিরের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আবির নিজের হাত বারিয়ে দিতে চাচ্ছিল কিন্তু নিয়তি হয়তো তা চাচ্ছিল না, নিয়ে চলে গেল আবিরকে। আরিশা আবিরের হাত ধরে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করতে চায়, আরিশার এই শেষ ইচ্ছেটিও নিয়তি পূর্ণ করেনি ধরতে পারার আগেই চলে যেতে হয়েছে।
নদীর কিনারে দুটি জীবনের অধ্যায় শেষ হল, দুজনের রক্তে বর্ণহীন জল লাল রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে, আকাশে বৃষ্টি, মেঘের গর্জন যেন প্রকৃতি সুখী হয়েও সুখী নয়। বৃষ্টির শীতল জল দুটি অস্তিত্বকে পরম আরশে আগলে রাখছে। দুটি প্রাণের অস্তিত্ব বিলিন হল কিন্তু কেউ টেরও পায়নি। কিছু অজানা সত্য ও ভুল ধারণার কারণে আজ তাদের এই পরিনতি।  

(জ্বী কিছু অজানা সত্যঃ আবির যেই ভুলের শাস্তি আরিশাকে দিল সেই ভুল আরিশা করেনি। আরিশার গাড়ি সেদিন সিম্মি ড্রাইভ করেছিল এবং সেই তিন্নির মৃত্যুর জন্য দায়ী। সিম্মি সেদিন আরিশার গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিল, আরিশা সিম্মির গাড়ি নিয়েছিল কারণ সিম্মি বলেছিল ওকে ওর গাড়িতে প্রব্লেম হয়েছিল। এটা হয়তো ওর প্ল্যান ছিল? আবিরের ভুল দেখা বা ভুল বোঝার কারনে আজ তাদের পরিনতি এত জটিল নয়তো ভিন্ন রকম হতে পারতো। আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি এই কথাগুলো গল্পে জানাইনি কেনো? এখানে আলাদা করে বলছি কেনো? কারন জীবনে যা চোখের আড়ালে ঘটে তার খবর আমরা জানি না বা রাখি না, আড়ালের জিনিস আড়ালেই থেকে যায় আর আমরা তা না জেনেই এ্যাকশন নেই। যেমনটা আবির-আরিশা করেছে)  

এই গল্পটি থেকে জীবনের অনেক কিছুই জানা যায় বা শেখা যায়। চোখে দেখা জিনিসই যে সর্বদা সঠিক হবে এমনটা নয়, চোখে দেখা বা কানে শোনা জিনিসও ভুল হতে পারে।
আবার জিনিসটা এমনও হতে পারে যে একটা বিষয় আমার দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে তেমন না হয়ে ভিন্ন হতে পারে।তাই যেকোনো কিছু আগে যাচাই করে বিচার বা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
পৃথিবীতে সবার ভালোবাসা সফল হয় না আবার সবাই ভালোবাসতেও পারে না। সব ভালোবাসা অস্তিত্ব পায় না।
ভুল বোঝাবোঝি মারাত্বক বাজে জিনিস, দুটি অক্ষরের শব্দ কিন্তু ক্ষমতা বিশাল। দেখতেই পাচ্ছেন তাদের একজনের ভুল ধারণা তাদের জীবন পালটে ফেললো।
ভালোবাসার মৃত্যু নেই, মৃত্যু হয় দেহের।
ভালোবাসা চিরকাল অমর ছিল, আছে এবং থাকবে।

ধন্যবাদ সকলকে পাশেই থাকবেন আশা করছি।