শীতের রাত। বোধ হয় আটটা বাজে। অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষা শেষ তাই পড়াশোনা নেই। এখন খাওয়া দাওয়া সেরে নানুর কাছে গল্প শোনার সময়, যেমনটা রুটিন অনুযায়ী হয়, তবে আজ ভূতের গল্প হবে । সবাই নানুর পাশে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে আছি। আমি বললাম নানু গল্প শুরু করো । নানু গল্প শুরু করল ভূতের আগুন নিয়ে  ।  বলতে থাকলেন- তিনি গ্রামের বাড়িতে যুবক বয়সে একাই থাকতেন আর মাঝেমধ্যেই নাকি এসব ভূতের আগুন দেখা যেত। আমি বেশ কৌতূহলী ছোটবেলা থেকেই এটি সকলেরই জানা কথা। স্বভাব অনুযায়ী আমি প্রশ্ন করলাম কেমন দেখতে? এত তাড়া কেন, তার উত্তর। বললেন বন্যা চলে যাওয়ার সময় নাকি এই আগুন বেশি দেখা যায়। এবার মূল পর্বের আরম্ভ হলো। বলতে থাকলেন- একদিন আমি জানালা খুলে শুয়ে ছিলাম, গভীর রাত তখন, বানের পানি পুরোপুরি শুকায় নি, আমারও ঘুম আসছে না আবার ভ্যাপসা গরম, ইলেকট্রিসিটি তো শুধু শহরে, তাই হাত পাখার বাতাস করতে হয় কিন্তু হাত পাখায় আর কাজ হচ্ছে না, এমন সময় হঠাৎ চোখ চলে যায় ফসলের ক্ষেতের দিকে আর দেখলাম একটি আগুনের গোলা হঠাৎ পানির উপর থেকে জ্বলে উঠলো আর এদিকে ওদিকে লাফালাফি করতে থাকল, প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে ভয়ে চোখ ফিরিয়ে আবার তাকানোর পরে আরও একটি আগুনের গোলা দেখলাম দূরের মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল গাছের উপর লাফাচ্ছে। শুধু তাই নয় এগুলো আবার ছোট বড় হচ্ছে। বেশিক্ষনও আবার থাকে নি কিছু সময় পরে নিভে গেছে। কি আশ্চর্য ব্যাপার? তাই না। ভয় পেয়ে নাকি তিনি তিন চার দিন অসুস্থ ছিলেন, আমাদের বললেন। আমার নানীও দেখেছেন তাই তারও বেশ সমর্থন আছে, বোঝা গেল। এমন সময় সিলিং উপর থেকে আওয়াজ আসলো। সবাই ভাবলো ভূত বুঝি এবার ঘরেই চলে এসেছে। যাহোক কিছুক্ষণ পর বোঝা গেল এটি বিড়াল ছিল। আমি বিজ্ঞান নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি ছোট বেলা থেকেই আর এই আগুন বিষয়ে একটি বইও পড়েছি তাই আমি বললাম - এখানে আমি কিছু বলতে চাই। আমার মামাতো ভাই বলল- তোরটা শুনবো নাকি দাদুরটা শুনবো। আমি উত্তর দিলাম আমারটাই শুনবি। আবারও শুরু করলাম, নানু তুমি সত্যিই বলেছ, আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু এগুলো ভূতের আগুন না। এগুলোকে আলেয়া বলা হয়, একটা বইয়ে পড়েছি। এবার কারণটা বলি, কিন্তু আমার ছোটগুলো


‌কেমন জানি অবজ্ঞা করছিল তবে আমি দমে যায়নি, বলতেই থাকলাম। এটি মার্স গ্যাসের কারণে হয়। মার্স গ্যাস বলতে সাধারণত মিথেন গ্যাসকেই বোঝানো হয় তবে আরও কিছু গ্যাসীয় পদার্থ আছে। বিজ্ঞানীরা মনে করে গাছপালা পচনের ফলে যে মার্শ গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা থেকে আলেয়া এর উৎপত্তি। যেহেতু মিথেন গ্যাসের আপনি জ্বলার ক্ষমতা নেই তাই আগুন শুরুর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দাহ্য ফসফিন  ও ফসফরাস ডাইহাইড্রাইট গ্যাসকে চিহ্নিত করেছে। কেউ মনে করেন বাঁশ বা শুকনো কাঠের ঠোক্করে যে স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয় তা থেকেই এই মার্শ গ্যাসে আগুন লাগায়। স্ফুলিঙ্গ তৈরি হলে মিথেন একটি দাহ্য গ্যাস বলে বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে আগুন ধরে যায় এবং জ্বলতে থাকে। গাছের উপরেও এমন হতে পারে আর বাতাসের কারণে এই আগুন এদিক সেদিক সরে যায় অর্থাৎ গতিশীল হয়। এটি শুধু ভৌতিক নয় বৈজ্ঞানিক ব্যাপারও, বুঝলা নানু- আমি বললাম। একটি বড় যুক্তিতর্ক শেষে তিনি বুঝলেন। কিন্তু আমার ছোট ভাই-বোন এরা কিছুতেই বুঝবে না, তাদের মতে এটা ভূতেরই আগুন।

 

মোঃ আরিফ খান
স্বাপ্নিক,রুচিশীল একজন সাধারণ ছাত্র। E-Mail:arianaling773@gmail.com
fb id : Arif Khan