ওসমানীয় খেলাফতের সূচনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত তুরস্কের "দিরিলিস আর্তুগ্রুল" ড্রামা সিরিজ,দুনিয়াজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি পেছনে ফেলেছে বিশ্বজয়ী টিভি সিরিজ "Game Of Thrones"কে। বিশ্বের ৭০ টি দেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পায় ইসলামিক মূল্যবোধতাড়িত এই ড্রামা সিরিজ টি।


"দিরিলিস আর্তুগ্রুল" এর প্রচার শুরু হয় ২০১৪ সালে,পরবর্তীতে বাংলাদেশসহ ৭২ টি দেশে এটি অনুমোদন নিয়ে সম্প্রচার করা হয়। তুরস্কের রাস্ট্রীয় টেলিভিশন "TRT 1"এ যেদিন এর শেষ পর্ব সম্প্রচার করা হয়(২৯ মে,২০১৯) সেদিন ছিল উসমানী সাম্রাজ্যের কন্সটানটিনোপোল বা ইস্তাম্বুল বিজয় এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতনের দিন(২৯ মে ১৪৫৩)।


মুসলিম শাসকদের মাঝে বিভাজন এবং খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে জ্ঞান বিজ্ঞান আভিজাত্য ও গৌরবপূর্ন স্পেনের ইসলামিক সাম্রাজ্য তখন বিলুপ্তির প্রহর গুনছিল অন্যদিকে বাগদাদের আব্বাসী খিলাফতও(৭৫০-১২৫৮)(১২৬১-১৫১৭) ডুবে যাচ্ছিল।



আবার সালজুক সাম্রাজ্যও(১০৩৭-১১৯৪) ধ্বংসের পথে হাটছিল। হিংস্রতা ও বর্বরতার সাথে মঙ্গল(১২০৬-১৩৭৬)বাহিনি খুন,লুন্ঠন,ধর্ষণ আর হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে মুসলিম সাম্রাজ্যগুলোর পতন ঘটাতে থাকে।তারা জনপদের পর জনপদ শুধু ধ্বংস আর ধর্ষণ করে গেছে। গোটা দুনিয়া ভেবেছিল ইসলাম বোধহয় এই শেষ,এমতাবস্থায় মুসলিম বিশ্ব জেগে উঠে অত্যন্ত আল্লাহভীরু ও নবী মুহাম্মদ(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রেমী এক যাযাবর জাতির নেতা আর্তুগ্রুল গাজীর হাত ধরে,যার উত্তরসুরীরা বীরত্বের সাথে সারা বিশ্বের বুকে পা দিয়ে দাড়িয়ে ছিল সুদীর্ঘ ৬০০ বছরেরও বেশি এবং মুসলমানদের দিয়ে গেছে নেতৃত্ব,ইতিহাসে যাদের বলা হয় অটোম্যান!


"দিরিলিস আর্তুগ্রুল"এর কাহিনি এই বীর আরতুগ্রুল গাজীকে ঘিরে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোয়ান এই ড্রামা সিরিজটিকে নিয়ে বলেছেন "এটি জাতির অন্তরে জায়গা করে নিয়েছে,তিনি নিজেও এই ড্রামার ভক্ত"



দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন মেন্ডোলার নাতি এবং দেশটির পার্লামেন্ট সদস্য Mandla Mandela ড্রামা সিরিজটির শুটিং দেখতে যান। এছাড়াও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট Nicolas Maduro ও গিয়েছিলেন এই ড্রামার শুটিং দেখতে।তিনি এই সিরিজটি দেখে এত টাই মুগ্ধ হয়েছিল যে তিনি ইসলামের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন সিরিজটির পরিচালক মেহমেদ বোজদাগ।শুধু তাই নয়,এই সিরিজ টেলিভিশনের পর্দায় দেখেও অনেকে ইসলামের সৌন্দর্য্যতা দেখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। আমেরিকার লস এঞ্জেলসের মুসলিম কমিউনিটির আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে এক মেক্সিকান দম্পতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।এই দম্পতিকে কালেমা পাঠ করান "দিরিলিস আর্তুগ্রুল"এর "আব্দুর রহমান আল্প" চরিত্রে অভিনয় করা Celal Al এবং তিনি ওই দম্পতিকে ইংরেজি ও স্পেনিশ ভাষায় দুটি কোরআন উপহার দেন। সেই দম্পতি বলেন - "দিরিলিস আর্তুগ্রুল দেখে আমাদের ইসলাম ধর্মের প্রতি কৌতূহল সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্নভাবে ইসলাম ধর্মের প্রতি প্রভাবিত হয়ে আমরা এই ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি"


এছাড়াও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনুরোধে গত রমজানে দেশটির রাস্ট্রীয় টেলিভিশন PTV তে "Ertugrul Ghazi" প্রচার করা হয়। ইমরান খান এই নাটকের ব্যাপারে বলেছেন- "দুঃখ হয় যে পাকিস্তানে হলিউড ও বলিউডের মত অন্যান্য সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ ঘটেছে যেখানে আমাদের সংস্কৃতিতে গৌরবৌজ্জ্বল ইতিহাসের সাথে রোম্যান্সও রয়েছে,যা ইসলামিক মূল্যবোধে সম্বৃদ্ধ।"

তিনি আরো বলেন: "দিরিলিস আর্তুগ্রুলের নির্মানশৈল অসাধারণ, রয়েছে রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা এবং রক্ষণশীল বার্তা যা পুরো পরিবার বসে একসাথে দেখতে পারে।" তিনি আরো মনে করেন ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে এই সিরিজটি সাড়া জাগানোর।ফলপ্রসুতে এই আর্তুগ্রুলের কারনে মে মাসের শেষ সপ্তাহে PTV এর ইউটিউব চ্যানেল ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেখা চ্যানেলের মধ্যে ৩৩ তম!


সিরিজটির পরিচালক মেহমেদ বোজদাগ বলেন "আমি কোনো বলিউড বা হলিউড এর জন্য কাজ করি না,তাজমহল থেকে আলহামব্রা পর্যন্ত ইসলামের রয়েছে সুন্দর সংস্কৃতি ও ইতিহাস,ইসলামের এই সুন্দর কন্ঠকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে হবে"




সৌদি আরব, মিশর আর আরব আমিরাত এই সিরিজটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আবার মিশরে তো এই সিরিজটিকে রাস্ট্রীয়ভাবে হারাম হিসেবে ফাতওয়া জারি হয়েছে। পাকিস্তানে দিরিলিস আর্তুগ্রুল প্রচার বন্ধের দাবি জানিয়েছিল সৌদি আরব। পরবর্তীতে ওসমানী খেলাফতের বিরুদ্ধে আরবদের যুদ্ধ নিয়ে ৪ কোটি ডলার খরচ করে "Kingdom of Fire" নামক ড্রামা তৈরি করে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত,যার জন্য ব্রিটিশ পরিচালক Peter Webber কে ভাড়া করেন। কিন্তু সেটি ফ্লপ হয়। অপরদিকে ভারতের কাশ্মীরেও প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এই টিভি সিরিজ।


"দিরিলিস আর্তুগ্রুল" টিভি সিরিজ এর "আর্তুগ্রুল" কোনো কাল্পনিক চরিত্র নয়।আর্তুগ্রুলের পদক্ষেপ ও প্রভাবের মাধ্যমে বিশ্বে যে প্রভাবশালী এক সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয় তা সুদীর্ঘ ৫০০ বছরের অধিক মুসলিম বিশ্বের অভিভাবক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে।


এই সাম্রাজ্য তথা খেলাফত(১৫১৭-১৯২৪) মুসলিম বিশ্বে কতটুকু দ্বায়িত্ব পালন করতে পেরেছে,ওসমানী সাম্রাজ্যের সফলতা,অর্জন,পতন,সুলতানদের জীবন নিয়ে বিস্তৃত ইতিহাস তুলে ধরতে আগ্রহী টীম ইতিহাসনামা।এ ব্যাপারে আপনাদের সকলের মতামত চাই।এছাড়া "দিরিলিস আর্তুগ্রুল" সিরিজটি আপনারা কে কে দেখেছেন এবং কেমন লেগেছে?


আবিদ আল মুদাব্বির
ইতিহাসনামা.কম এর প্রধান কনটেন্ট রিসার্চার। ইতিহাসের পাতায় ডুবে থাকতে ভালবাসেন। যেখানে লোকের বিশ্বাস "বর্তমানে বাঁচো এবং ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করো",সেখানে তিনি বিশ্বাস করেন, অতীত ইতিহাসের পাতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে চলায়!