রোদ
ঝলমলে শরতের মিষ্টি সকাল। সূর্য উঠে গেছে অনেকটা আগে। বেলা বেড়ে চলেছে ক্রমশ তার নিজের নিয়মে। বেলা যত বাড়ছে রোদের
তেজও তত বাড়ছে।অন্য দিন
বীনা অনেক ভোরে জেগে ওঠে। আজ উঠতে পারেনি।



আজ
কেন জানি কিছুতেই এই কংক্রিট আর
ছেড়া চট ছেড়ে উঠতে
ইচ্ছে করছিলো না তার।প্রতিবার ওঠার জন্য মাথা উঁচু করেছে আবার মাথা নামিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছে। মনে হচ্ছে মাথাটা কয়েক কেজি ভার।শরীরে জ্বর জ্বর ভাব প্রবল।



ছোট্ট
স্টেশন তবে লোক সমাগম যথেষ্ট ভালো।প্রতিটা স্টেশনের ক্ষেত্রে যা
হয় এই স্টেশনকে
ঘিরেও গড়ে উঠেছে বাজার। স্টেশনের নাম মোমিননগর।ছোট্ট কিন্তু বেশ ছিমছাম বাজার।



বীনা
চোখ মেলে লোকজন দেখে।কেউ কেউ তার গাঁ ঘেসে ইচ্ছা করে মাড়িয়ে চলে যাচ্ছে। এগুলো শয়তানি।আজকাল বীনা অনেক কিছুই বোঝে।



সে
কোনদিন এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমায় না।নিতান্ত শরীরটা খারাপ তাই উঠতে ইচ্ছে করছে না তার।এতোক্ষণে কেউ এসে যে তাকে দাবড়ায়নি
সেটাই তার সৌভাগ্য বলতে হবে।



মায়ের
কথা মনে পড়ছে খুব।অসুখ বিসুখ আর ক্ষিদে পেলে
মায়ের কথা মনে পড়ে। মা যে হঠাৎ
করে কোথায় উধাও হয়ে গেলো কে জানে।মায়ের কথা
মনে হলে তার খুব কষ্ট হয়।



এখন
আর চোখে ঘুম নেই তবু রাজ্যের ক্লান্তি তার সারা শরীর জুড়ে।মুখের ভেতরটা শুকিয়ে এসেছে। কেমন যেন আঠালো আঠালো ভাব।খুব পানি পিপাসা পেয়েছে।



কেউ
যদি একটু পানি দিতো তাহলে তৃষ্ণা মেটাতে পারতো সে। কে দেবে পানি?
সে কপাল তার না।তবুও সে একটু পানির
আশায় এদিক ওদিক তাকায়।নাহ কোন আশা নেই, তাকে নিজে উঠতে হবে।



অনেকটা
সময়ের চেষ্টাতে সে কোন রকম
টলমল পায়ে উঠে দাড়ালো।



মাথার
মধ্যে এখনো ঘুরছে।লাল রঙের একটা কুকুর তার আশেপাশে খানিক ঘুরঘুর করে চলে গেলো।কুকুর দেখলে তার খুব ভয় লাগে। এই
সময়গুলোতে সে ভয়ে সিঁটিয়ে
চোখ মুখ বন্ধ করে রাখে।কুকুর অবশ্য তাকে কোনদিন কামড়ায়নি তবু অজানা কারণে তার কুকুর দেখলে ভয় লাগে।



এই
কুকুরটাও এক সময় চলে
গেলো নিজের খেয়ালে।কুকুরটা চলে যাবার পরে বীনা কোন রকমে উঠে,ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে রাস্তার পাশের কল থেকে পানি
খেলো। তারপর চোখে মুখে পানি দিলো, এখন একটু ভালো লাগছে।



সে
ভেবেছিলো অনেকটা পানি খাবে।নাহ গালের ভেতরটা তেতো হয়ে আছে। সে খুব বেশি
পানি গলা দিয়ে নামাতে পারলো না।



পানিতো
খাওয়া হলো এবার চটের কাছে ফিরে যেতে হবে, না হলে অন্য
কেউ সেটার দখল নিয়ে নেবে।বীনা হাঁটতে লাগলো।চটের কাছে আসতেই সে বুঝতে পারলো
তার খুব ক্ষিধে পেয়েছে।



পেটের
ভেতর মোচড় দিচ্ছে। কাল দুপুরের পর থেকে কিছু
খাওয়া হয়নি।হবে কি করে, কারো
কাছে যে কিছু চাইবে সেই
শক্তি টুকু তার ছিলো না।সামনে একটা হোটেল আছে।হোটেলের নাম আল মদিনা।



স্টেশনের
এদিকটায় একটাই মাত্র হোটেল। দফায় দফায় ভালো বেচাকেনা হয় সেখানে।কি ভেবে
বীনা ওদিকটায় যেতে গিয়েও এক পা দু
পা করে ফিরে এলো।



হোটেল
মালিক লোক সুবিধার নয়। আশে পাশে ঘুরতে দেখলেই গরম তেল ছুড়ে মারবে।গরম তেলে খুব জ্বালা করে। চামড়া পুড়ে হাড় স্পর্শ করে।ঘা সহজে শুকায় না।



কদিন
আগের পোড়া ”ঘা”টা এখনো
শুকায়নি বীনার। ক্ষত স্থানের কথা মনে হতেই তার চোখ ছলছল করে উঠলো। দুনিয়ার মানুষগুলো এতো নিষ্ঠুর কেন?



তার
মাথার মধ্যে আবারও ঘুরছে কিছু খাবার পেলে যদি মাথা ঘুরাটা কমে। কিন্তু কে দেবে তাকে
খাবার? হঠাৎ তার পাশ দিয়ে একটা কুকুর কোথা থেকে একটা পরোটা ভর্তি প্যাকেট মুখে করে নিয়ে এসে এদিকটায় নিরাপদ ভেবে নামিয়ে রাখতেই বীনা সুযোগ বুঝে নিমেষে ছোঁ মেরে পরোটার প্যাকেটটা মরিয়া হয়ে ছিনিয়ে নিলো, কুকুরটির সামনে থেকে।



কুকুরটি
কামড়াতে এলে বীনাও দাঁত মুখ খিচিয়ে এলো। এখন আর তার কুকুরকে
ভয় করছে না, কুকুর এখন তার প্রতিদ্বন্দী, কি ভেবে কুকুরটি
রণে ভঙ্গ দিয়ে দুরে দাড়িয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে ঘেউ ঘেউ স্বরে ভয় দেখাতে লাগলো।বীনা
জানে তাকে টিকে থাকতে হবে।বাঁচতে হবে ,বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে, এই খাবার টুকু
তার চাই-ই চাই।



এদিকে
প্যাকেটের মালিক ও কুকুরের পেছন
পেছন এসে হাজির।



বীনা
মনে মনে ঠিক করলো যা হয়ে যায়
যাবে সে কিছুতেই এই
প্যাকেট ফেরত দেবে না।....কিছুতেই না।


 


আমি মোঃ রফিকুল ইসলাম।অবসর কাটে বিভিন্ন ব্লগে লেখালিখি করে। আমি সাধারণত গল্প ,কবিতা ও ছড়া লিখতে পছন্দ করি।
fb id : Arif Khan