প্রনয়স্পর্শী শহর - লিখেছেন - মোঃ আরাফাত তালুকদার
কার্সিনোজেনিক পদার্থ শ্বাসনালীতে প্রবেশ করায় এতটা সময় এই চার দেয়ালের মাঝে বন্দি হয়ে আছি । এই চার দেয়ালকে বেনজিনের বলয় চিন্তা করলো খুব একটা মন্দ হয় না । বেনজিনের পাই ইলেকট্রনের সাথে নিজেকে তুলনা করতেই অন্তঃপ্রানে এক আচ্ছন্ন ভাব ফুটে উঠে । "সাস্পেন্ডেড পারটিকুলেট ম্যাটার " এই বিষয়টাতে অবগতই হতে পারতাম না যদি না অপার সময় এই আরামদায়ক আলস্যে না থাকতে হতো । বিরস মুখে যখন অসার সময়ের কল্পকাহিনী উপলব্ধি করি তখনই চোখ ভিজে উঠে ।
অন্ধ অরন্যে থেকে অনেকটা সময় কেটে গেল । আবেগ তুঙ্গ স্পর্শী করে আগের মতো এখন কোন কাব্য রচনা করা হয় না। অতীতের সেই সীমারেখায় আমার বৃতান্ত লিখা কবিতা শুনার জন্য সবাই কতই না আগ্রহী হয়ে উঠে । তখন সবাই আবেগ ত্বরান্বিত করে বলে উঠতো " আমি নাকি ধ্রুপদ কাহিনী নির্মাতা ।" টলমলানো সোনালি ঢেউয়ের মতো অতীতের সীমারেখা পার করে উদ্বেল সময়কে সাক্ষী রেখে এক নতুন সীমারেখায় পদার্পণ করলাম ।
এখন আমি স্মৃতির পাতায় রচনা করি এক বিশাল কাব্য , কিন্তু এই রচিত কাব্য উদাস মনে নিজেই নিজের চিত্তকে আবৃতি করে শুনিয়ে থাকি । অতীতের সিমারেখায় সবার বেশিরভাগ সমস্যা আমার হাতেই সমাধান হতো । আমি সকল সমস্যাকে ত্রিকোণমিতিক সমীকরণ মনে করে থিটার এর একাধিক মান এর মতো একাধিক সমাধান অনুবাদে লিপ্ত হতাম । কিন্তু এখন কেউই সমস্যা নিয়ে আমার কাছে ভিড় জমায় না । এখন নিজের সমস্যাগুলোকে নানান ভাবে ত্রিকোণমিতিক সমীকরণে সাজিয়ে সমাধান নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে থাকি । অতীতের সীমারেখার মতো এখনো কিন্তু নিজেকে "ট্রায়াল এন্ড এররের " সাথে তুলনা করতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি ।
ট্রায়াল এন্ড এররের মতো সবকিছু যদি আগের মতো হতে পারতো , হিম শীতল গলায় কথাটা বলতেই জানালার দিকে চোখ গেলো । এখনো একজন আমার কবিতা আবৃতির অপেক্ষায় বসে আছে ।
"বিকেলের এই প্রসন্ন বাতাসের এক প্ররোচনায়
সময়ের নগ্নতায় একঘেয়ে শহরের বিদায়
গ্রামের মেঠোপথ মোরে ......
ডানা ঝাপটে সেও হারিয়ে গেলো , আমিও আবৃতি করা বন্ধ করে দিলাম ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO এর মতে বাতাসে সাসপেন্ডেড পারটিকুলেট ম্যাটার এর পরিমান ২০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি হয়ে গেলেই তা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর । কিন্তু বিস্তৃত এই শহরের কনিকার পরিমান ৪০০ মাইক্রোগ্রাম । আজ এই কণিকাগুলো আমাকে ক্যান্সার নামক মরণ ব্যাধির সাক্ষী করলো এটা ভাবতেই আমার শরীর শিহরিয়ে উঠে । এবার জন্মদিনটাও হেলার খেয়ালে কেটে গেল । এবারও আমার লেশমাত্র তৃপ্তির জন্য অনেকেই ক্র্যাব ন্যাবুলার পঞ্চম গ্রহের পশু রিরি উপহারের কথা স্মরণ করালো ।
অনেকদিন কফি খাওয়া হয় নি । ইন্সমনিয়া রোগে ভুগার কারনেই কফি খাওয়া বন্ধ করেছি । আজ কফি খেতে খেতে এক গুচ্ছ তারাদের সাথে গল্প করবো । পৃথিবী থেকে ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে ৭ টি তারা জ্বলজ্বল করছে ।
" কাদানরম আলোভরা চোখে
অলিক স্বপ্ন বাসর রচনা
নন্দনতাত্ত্বিক চেতনা নিয়ে
প্রনয়স্পর্শ ও নিরাপদ শহর গড়া ।"