রাশনা মেহেরুন অন্তরার দুইটি কবিতা
কবিতার ভাষা
আমি কবিতার ভাষা খুঁজতে গিয়ে
দেখি - আমার শুষ্ক মনটা খড়কুটার মতো
পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে ।
বহ্নিশিখার তপ্ততা কবিতা বিলাসী মনটাকে
জ্বলন্ত হিটারের মতো দগ্ধ করছে।
হৃদয় নিংড়ে যদি বের করতে পারতাম শিশিরস্নাত ভাষা
জন্ম দিতাম অবিনশ্বর কবিতার পঙক্তি।
আমার সীমিত জ্ঞানের আত্মা নিভৃত অন্ধকারের
ভাষার খোঁজে অন্ধকার দ্বারে বসে থাকে।
আমার কবিতা বিলাসী মন নদীর কল্লোলের
ভাষা খুঁজতে গিয়ে নির্ঘুম রাত্রি অতিক্রম করে।
অনেক খুঁজে আমি পেয়েছি শূন্যে ভাসমান বাড়ি।
দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ব্যর্থতার প্রতিধ্বনি বাজে
তবু ব্যর্থতারও ভাষা আছে,
ব্যর্থতার ভাষা খুঁজে পেয়ে ব্যর্থ মুগ্ধতায় বদ্ধ প্রকোষ্ঠের
শৃঙ্খলের মাঝেই আমি কলম হাতে নিলাম।
ভাষা শহীদরা তাকায় আমার চোখের দিকে
তারপর আমার কলমটি আর থামতে চাইলো না
আমারই হাতে তার নিরন্তর ছুটে চলা
অথচ মনে হয় আমারই অজ্ঞাতে সে
অজস্র মণির কবিতা-প্রাচীর বানিয়েছে ,
আমার পিপাসা মিটিয়ে এই নিত্য পবন বয়ে যাওয়া মনটায়
গোলাপ -রজনীগন্ধার সুবাস ছড়িয়ে
কবিতার মুকুট বানিয়েছে।
কবিতার মুকুট এই নগণ্য কবির মাথায়
সযতনে পরিয়ে দিল সে।
পলায়নপর যন্ত্রমানব
আমরা শিকলে বন্ধ করে রেখেছি 'মনুষ্যত্ব'
ফেলে দিয়েছি আবর্জনার স্তূপে 'নৈতিক মূল্যবোধ'
বদ্ধ জাদুঘরে সাজিয়ে রেখেছি 'মানবিকতা' আর 'সহানুভুতি'
ধর্মীয় আদর্শ বাণী শুধু বইয়ের পাতায়ই রেখেছি।
আমরা চারিদিকে শুনি মননের আত্মচিৎকার
দেখি- অর্থ লোলুপতার মোহের জরা খ্যাতি,
আজ ব্যথিতের হাহাকার আর লাঞ্ছিতের ক্রন্দনধ্বনি,
হোমরা চোমরার শোষণ নিষ্পেষণে পিষ্ট অসহায় মানুষ,
সহস্র মৃত্যুর ধ্বংসোন্মুখ খেলা,
কষ্টার্জিত স্বাধীন দেশে দ্বিধান্বিত মানবাত্মার যুদ্ধ।
মানবতা, সহানুভুতি আর শুভ বোধ অকালে বিনষ্ট হয়,
আবেগঘন স্ট্যাটাস শুধু জেগে থাকে ফেইসবুকে,
বিপ্লব স্থির হয়ে থাকে শুধু মনে , কর্মে নিকুচি
আমরা হয়ে যাই পলায়নপর যন্ত্রমানব।
বোধযন্ত্রগুলোর অপব্যবহারে ছেয়ে থাকে হৃদয়
গুমোট আঁধার বেঁচে থাকে মনে
ছারপোকারা খেয়ে ফেলে আমাদের বোধশক্তি।
তবু শুভ বুদ্ধির সম্ভাবনা মরে না
আমরা মরে যাই বোধহীন অশুভ কর্মে।