দিনশেষে পূর্ণতাই সব.... - লিখেছেন - আয়েশা এশা
আজ ঝুম বৃষ্টি। সায়ান ঘুম থেকে উঠে সোজা ওয়াশরুমে গেল। ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে দেখে ৮.৪৫ বাজে, যেখানে ৮.৩০ টায় তার ক্যাম্পাসে থাকার কথা।
অন্যদিকে, নিশি খুব রেগে আছে। নিশি অল্পতেই রেগে যায় খুব বেশি। ১২টা ফোন দিয়েছে নিশি সায়ানকে; একটি ফোনও সায়ান দেখেনি-ধরেনি, রাগ করাটা স্বাভাবিক।
সায়ান তড়িঘড়ি করে রেডি হচ্ছে, সেই সময় সায়ান এর মা সায়ান এর রুমে আসলো, বলল- বাবা, আজ তুই এতো তাড়াহুড়ো করে সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছিস?
সায়ান রাগতস্বরে বলল, মা, আমি তোমাকে কাল বলেছিলাম না? আজ আমার সকাল সকাল বেড় হতে হবে। আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ আসে। তুমি ডাকলে না কেন?
মা উত্তর দিল, আমি ভাবলাম এতো বৃষ্টি, তুই আজ বের হবি না। এমন কি কাজ যে যেতেই হবে?
যাচ্ছিস যখন নাস্তা দিয়েছি, খেয়ে যা বাবা!
সায়ান উত্তর দিলো, মা, আমার এখন খাওয়ার মতো সময় নেই, আমি যাচ্ছি। আমার ফিরতে ফিরতে বিকেল হবে। বলে সায়ান বেরিয়ে গেল।
হেঁটে হেঁটে সায়ান একটা রিকশা পেল। যেই সে রিকশায় উঠবে তার মনে পড়ে সে মানিব্যাগ আনতেই ভুলে গিয়েছে। কি আর করার! এমনিতেই দেরি করে ফেলেছে, আবার বাড়ী গেলে আরো দেরি হবে। তাই সে আবার হাঁটা শুরু করল। এখন সে কার্জনহলের সামনে চলে এসেছে!
নিশি এর মধ্যে আরো দু'বার ফোন করেছিল কিন্তু সায়ান তাকে আরো রাগানোর জন্য ফোন ধরেনি।
যাক বাবা আজ কপালে কি আছে আল্লাহ ভালো জানে, বলতে বলতে দেখে একটি ১২- ১৩ বছরের কিশোরী মেয়ে তার সামনে এসে বলছে, ভাইয়া এই ফুলগুলা কিনবেন? আমি সকালতে কিছু খাই নাই!
সায়ান মনে মনে ভাবতে শুরু করে, এভাবেই তো দেরি করে ফেলেছি, কপালে কি আছে আজ আল্লাহ জানেন! আর নিশি বেলিফুলের মালা খুব পছন্দ করে, কিন্তু আমার কাছে তো টাকাই নাই।
কিন্তু নিশির জন্য সে ফুল নিবেই! সে তার বিকাশ থেকে কিছু টাকা তুলে ফুল কিনে ফেললো।
এখন সায়ান আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে বেলিফুল হাতে নিশির ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছে। হেঁটে হেঁটে একা একাই বলতে লাগলো, নিশি ফুলগুলো দেখে বলবে, সায়ান তুমি সবসময়ই এমন কর কেন? আমাকে অপেক্ষা করাতে খুব ভালোলাগে তাই না?
কিন্তু সায়ান নিশির সাথে দেখা করল... দেখে তাকে ফুলগুলো দিল, কিন্তু সায়ানের ভাবনা অনুযায়ী নিশি কিছুই বলল না।
নিশি কথা বলছে না, চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে!
সায়ান বলল, সরি, আমি দেখিনি তুমি আমাকে এতো ফোন দিয়েছো... আর আজ আমাকে মা তুলে দেইনি। তাই আরো দেরি হয়েছে।
নিশি, ফুলগুলো হাতে নীল ড্রেসে খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে!
নিশি বলল, হয়েছে রাখ তোমার সুন্দর! নিশি মলিন গলায় সায়ানকে বলল, সায়ান, আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে! সায়ান উত্তর দিল, কি কথা? নাস্তা খেতে খেতে বলি চল?
- সায়ান, আমি কিছু খাওয়ার মতো অবস্থাতে নেই! তুমি আমার কথাগুলো শুনবে কি মন দিয়ে তা বল?
- কি হয়েছে বল শুনি?
নিশি বলল, সায়ান, তুমি বলেছিলে আজ আমরা সারাদিন ঘুরবো। কিন্তু তুমি সবসময়ের মতো আজও দেরি করে আসলে! একদমই ভালোলাগেনা এইসব। মিনিটখানিক এর মধ্যেই নিশির মন ভালো হয়ে গিয়েছে,
- সায়ান, চল না ফুচকা খাই একসাথে!
সায়ান ৩০মিনিট ধরে এই কথা শুনার অপেক্ষাই করছিল। কখন ম্যাডাম এর মন ভালো হবে!
নিশির সাথে কিছুক্ষন গল্প করে ঘুরাঘুরি, ফুচকা খেয়ে, সায়ান নিশিকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে তিনটা স্টুডেন্ট পড়িয়ে বাড়ি ফিরছিল।
একা একা হাঁটছে সায়ান আর ভাবছে, আজ তার সারাদিন তেমন ভালো কাটেনি! সময়মতো ঘুম থেকে উঠে সে ফরজ সালাতে অংশগ্রহণ করেনি। আবার সে ঘুম থেকে সময়মতো উঠে ক্যাম্পাসেও যেতে পারেনি! তার উপর মায়ের সাথে সকাল সকাল সে রাগান্বিত হয়ে কথা বলেছিল।
এছাড়াও সায়ানের একটা স্টুডেন্টও ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সিরিয়াস না! গত দুই বছরে অনেক স্টুডেন্ট সায়ান পড়িয়েছে কিন্তু এদের মতো একজনও ছিল না!
সব মিলিয়ে সায়ানের মনটা খারাপ। বাসায় গিয়ে সে আছর নামায পড়ে একটু পড়াশুনা করবে ভেবেছিল। কিন্তু নিশি আবার ফোন দিয়ে বলছে, তার বন্ধু আসবে তাকে নিতে, তারা আজ খেতে যাবে।
বাসায় এসে দেখে তার মা বসে আছে খাবার নিয়ে।
সায়ান রুমে এসে আরো কষ্ট পেল যে মা এখনো খায়নি!
রীতিমতো সায়ান গোসল করতে গেলে চোখে পানি চলে আসে।
আজ আমি মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে গিয়েছি, তাও মা আমার জন্য বসে আছে!
গোসল শেষ করে নামায পরে সে দেখে তার মা তার প্রিয় খাবার নিয়ে বসে আছে।
অবশেষে সায়ান এর চোখে পানি এসেই পড়ছে। চোখ মুছতে মুছতে মাকে বলছিল, মা, আজ তোমার হাতে খাবো, খাইয়ে দাও তো! মা তাকে খাইয়ে দিলো। সে খেয়ে রুমে গিয়ে নিশিকে ফোন দিল।
কিন্তু নিশি ফোন ধরলো না।
কিছুদিন পরের কথা,
নিশি আর সায়ান এর ভালবাসার গল্প ভালোই যাচ্ছিল। সায়ান আর নিশি দুইজন মিলে কোনো একটা বিজনেস করতে চায়, যাতে তাদের ভবিষ্যৎ সিকিউরড হয়! কিন্তু নিশির পরিবার সরকারি চাকরিপ্রেমী! তারা মনে করে "ব্যবসা" জিনিসটা লো ক্লাস এর মতো! কিন্তু সায়ানের চিন্তাধারা অন্যরকম। সায়ান স্টূডেন্ট ভালো এবং সে জানে সে চাইলেই ভালো সরকারী চাকরি করতে পারবে!
কিন্তু সে নিজে উদ্যোক্তা হতে চায়! সায়ান নিশিকে অনেকবার ব্যাপারগুলো বুঝিয়েছে, কিন্তু কেন যেন নিশি বুঝতে চায় না, ওর মাঝে একটা অনীহাভাব খুঁজে পায় সায়ান!
কিন্ত কিছুদিন ধরে সায়ান খেয়াল করছে নিশি কেমন যেন আগের মতো নেই। সে খুব অস্থির টাইপ হয়ে যাচ্ছে- বুঝে আর না বুঝে সে রাগারাগি করছে অযথাই।
আজ বুধবার। সায়ান ক্যাম্পাস থেকে ফিরে সবকাজ শেষ করে ঘুমাতে যাবে, নিশিকে ফোন দিয়েছে।
অপর পাশ থেকে নিশি, হ্যালো।
সায়ান বলল, কেমন আছো? সারাদিন আজ খুব ব্যস্ত ছিলাম! আজকে প্রায় ৫টা স্টুডেন্ট টানা পড়িয়েছি।
আর নিশি, আজ ৪জন স্টুডেন্ট এর আম্মু সেলারি দিয়েছে!
৪৫ হাজার টাকা! ব্যাংকে রেখে এসেছি, এগুলার জন্যই ফোন দিতে পারিনি, সরি!
নিশি উত্তর দিলো, আমিও ব্যস্ত ছিলাম!
সায়ান জিজ্ঞেস করল, কিন্তু আজ তোমার ক্লাস ছিলো না তো!
নিশি- না, মানে তোমাকে বলেছিলাম না? তানিয়ার বিয়ে আগামী মাসের দিকে? তো ভাইয়া আর তানিয়া মার্কেটে গিয়েছিল। আমাকেও নিয়ে গিয়েছিল।
সায়ান- অহ আচ্ছা। নিশি, আমি ঘুমিয়ে পড়ি? তুমিও ঘুমিয়ে যেও। বলে সায়ান ফোন রেখে দিয়েছে।
আসলে সায়ান একটু অন্যরকম চিন্তা করে! সায়ান দিনরাত চেস্টা করছে, টিউশনি করাচ্ছে যে দুইজন মিলে তারা কিছু একটা করবে! কোনো একটা বিজনেস, যেখানে নিশি তাকে সাহায্য করবে! কিন্তু সায়ান কখনোই তেমন কোনো সাড়া নিশির হতে পায় না!
সায়ান বুঝে উঠতে পারে না কি করবে! নিশি মার্কেটে গিয়েছে এতে ওর খারাপ লাগেনি, কিন্তু সায়ানের কেন মনে হল সেই অনীহার বিষয়টি!
সায়ান তো দুইজনের কথা ভেবেই সব করছে কিন্তু নিশি?
ঘুমিয়ে গেল সায়ান!
নিশি খুব ব্যস্ত তার বান্ধবীর বিয়ে নিয়ে। এদিকে সে ভুলেই গিয়েছে সায়ান তাকে কিছু প্ল্যানিং করতে বলছিল। কিন্তু নিশি বুঝেও বুঝছে না সায়ানের খারাপ লাগছে!
৫দিন বাকি তানিয়ার বিয়ের! সায়ানকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। মেহেন্দি, হলুদ, বিয়ে আরো কত প্রোগ্রাম তাদের! সবগুলোতেই সায়ানকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে!
সায়ান এমন হৈ-হুল্লোড় করে বিয়ে পছন্দ করে না। সে খুব সিম্পল পছন্দ করে! আসলে সায়ান লোক দেখাতে পছন্দ করেনা! সে আনন্দ-ফুর্তি গুলোকেও সাধারনভাবে গ্রহণ করতে পছন্দ করে!
ছোট ছোট বিষয়ে সে আনন্দ খুঁজে পায়! আর সায়ানের একটা বিশ্বাস, বিয়ে হলো সুন্দর ও পবিত্র বন্ধন! আর তাই সায়ানের বিশ্বাস বিয়ের পবিত্রতা রক্ষার্থেই প্রয়োজন মানুষের দোয়া! অনেক বড় বড় মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো অনেকটা লোকদেখানো মনে হয় তার কাছে!
তার চেয়ে সেই অর্থটুকু দ্বারা দু’বেলা ঠিকভাবে খেতে পারেনা এমন কিছু দরিদ্র মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিলে হয়তো তারা মনখুলে দোয়া করবে! যাতে বিয়ের সৌন্দর্যতা ও পবিত্রতা আরো বৃদ্ধি ও রক্ষা পাবে!
নিশির ক্লাস শেষ আজকের মতো, তার বন্ধুরা আজ ৩০০ফিট যাচ্ছে, তাকেও খুব জোর করছে! কেউই অবশ্য যেত না, তানিয়ার বিয়ে হয়ে যাবে। তাই তাকে একটু আনন্দ দিতে যাবে সবাই।
নিশির যেতে তেমন ইচ্ছে নাই তাও তানিয়া নিশির খুব ভালো বন্ধু। এখন না গেলে ওর খারাপ লাগবে তাই নিশি যাবে।
নিশি বাড়িতে ফোন করে বলেছে বন্ধুদের সাথে যে একটু ঘুরতে যাচ্ছে।
নিশি একদিক থেকে অনেক ভালো। সে মিথ্যা কথা বলে না। সায়ানকেও ফোন দিয়েছে!
কিন্তু সায়ানের আজ এক্সাম তাই তার ফোন বন্ধ। তাই নিশি সায়ানকে না জানিয়েই ৩০০ ফিট যাচ্ছে।
সায়ানের এক্সাম শেষ! সায়ান হল থেকে বের হল!
আজ সায়ান সাদা শার্ট পড়েছে! সায়ানকে খুব সুন্দর লাগছে আজ সাদা শার্ট পড়াতে।
রবি সায়ানকে ডাকল, দোস্ত?
সায়ান বলল, কিরে তোকে যে হলে দেখলাম না?
রবি সায়ানের সাথেই পড়ে!
রবি উত্তর দেয়, তুই দেখবি কিভাবে রে? তুই তো প্রশ্ন পেলে পারলে খাতার ভিতরে ঢুকে যাস। আমার ব্রিলিয়ান্ট বন্ধু!
সায়ান, কি যে বলিস! বলতে বলতেই সায়ানের মা ফোন দিচ্ছে,
সায়ানের মা জিজ্ঞেস করল- বাবা, তোর পরীক্ষা কেমন হয়েছে?
সায়ান উত্তর দিল- মা তোমার ছেলে সবসময় যেমন এক্সাম দেয় আজ তেমনই দিয়েছে। আচ্ছা মা, রাখি। আমি নতুন স্টুযেন্টের বাসায় যাব। বাড়ি এসে কথা হবে।
তখন তিনটা বাজছিল! সায়ান নিশিকে ফোন দিয়েও দিলো না, কারন সে ভেবেছিল ক্লাস করে নিশি বোধ হয় বাসায় গিয়ে ঘুমাচ্ছে!
গতরাতে আবার তাদের ঘুমাতে দেরি হয়ে গিয়েছিল!
সায়ান পাঠাও বাইকে ৩০০ফিটের দিকে যাচ্ছে। সে আজ একজন নতুন স্টুডেন্ট পড়াতে যাচ্ছে, একটু কেমন কেমন যেন লাগছে।
পাঠাও থেকে নেমে সায়ান দেখতে পেল তার ফোনে ওই নতুন স্টুডেন্টএর কল এসেছে! সায়ান কল রিসিভ করে জানতে পারল ছেলেটি এক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিল, সে আজ পড়তে পারবে না! সায়ানকে আগে জানাতে ভুলে গিয়েছিল!
সায়ান প্রচুর রেগে গিয়েও নিজেকে কন্ট্রোল করল! সে আউযুবিল্লাহিমিনাশশাইতুয়ানিররাজিম পড়তে থাকল!
সায়ান ভাবল এদিকে যখন এসেছেই, একটু নিশিকে ফোন দিয়ে বাসা থেকে এখানে চলে আসতে বলবে!
দুইজন কিছু সুন্দর সময় কাটাবে!
কিন্তু হঠাৎ সে দাঁড়িয়ে যায়। একটা মেয়েকে দেখে। একদম নিশির মতো মেয়েটা, মেবি টিকটক করছে বন্ধুদের সাথে।
সায়ান ভালোকরে মেয়েটার মুখ দেখার জন্য সামনে যায় আর সে দেখে আসলেই সেই মেয়েটি নিশি!
সায়ান নিশির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, নিশিও সায়ানকে দেখে এগিয়ে আসছে।
সায়ান বলল, আমি হয়তো ভুল দেখছিনা, তুমি এখানে?
নিশি উত্তর দেয়, সায়ান, তানিয়ার আজ বাদে কাল বিয়ে। তাই সবাই এসেছে ওর সাথে একটু সময় দিতে!
- অহ! আমি ভাবছিলাম...........তুমি থাকবে ওদের সাথে? নাকি আমার সাথে যাবে?
- না, আমি তোমার সাথে যাব। দাঁড়াও, ওদের বলে আসি?
- হুম, যাও।
সায়ান উবার কল দিল।
- সায়ান, আমি তোমাকে কল করেছিলাম। কিন্তু তোমার ফোন বন্ধ ছিল আর আজ তোমার এক্সাম- তাই আর বলা হয়নি, কিন্তু তুমি এখানে?
সায়ান উত্তর দেয়- হ্যাঁ, নিশি!
উবার গাড়ির জানালার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিল।
নিশি আবার জিজ্ঞেস করলে সায়ান বলল- আমি নতুন স্টুডেন্ট পড়াতে এসেছিলাম, আজ আর পড়াবো না.. বাড়ি যাব!
তারা বাড়ি চলে গেল!
সায়ান বাড়ি এসে গোসল করতে ঢুকে গেল।
বের হয়ে সে শুয়ে আছে বিছানায় আর ভাবছে আজ কি হল? আমি ভেবেছিলাম নিশি ক্লাস শেষএ বাড়ি এসে ঘুমাচ্ছে কিন্তু নিশি ৩০০ফিট গিয়েছে। ছেলে-মেয়ে একসাথে তারা টিকটক করছিল? নিশিও করছিল।
কিন্তু আমিতো নিশিকে মানা করেছিলাম এমন ভিডিও না করতে! এসব সস্তা বিনোদন গ্রহনের কি মানে?
এগুলো ভাবতে ভাবতে মাগরিবের আযান দিয়ে দিয়েছে, সায়ান নামায পড়ে আবার শুয়েছিলো। সে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
কাল তানিয়ার বিয়ে।
নিশি সায়ানকে বলেছে যে তুমি কাল পাঞ্জাবি পড়ে আসবা। আমি তুমি অনেকটা সেম থাকব।
নিশির কথা সায়ান যতই শুনছে ততোই অবাক হয়ে যাচ্ছে। নিশি এমন ছিল না।
আজ তানিয়ার বিয়ে। সায়ান ঠিক সময়মতো নিশির বাসার নিচে অপেক্ষা করছে। নিশি আর সায়ান একসাথে যাবে বিয়েতে।
নিশি বাড়ি থেকে বের হয়ে সায়ানএর সামনে আসলো,
সায়ান- তুমি, লেহেঙ্গা পরেছ?
নিশি উত্তর দেয়- আমি তো তোমাকে বলেছিলামই তানিয়ার বিয়েতে আমি অনেক সাজবো।
সায়ান – অহ!হ্যাঁ। তবে আজ যে হিজাব পড়নি, নিশি?
নিশি- সায়ান তুমিও না! লেহেঙ্গার সাথে কেউ হিজাব পড়ে? তুমি কখনো দেখেছ? আজ আমি দেখ কত সুন্দর করে ফুল দিয়ে মাথায় খোপা বেঁধেছি!
আমাকে সুন্দর লাগছে না?
সায়ান কিছু সময় চুপ থাকে, হ্যাঁ, নিশি, সুন্দর লাগছে।
সায়ান সবকিছুকে স্বাভাবিকভাবে নিতে চেয়েও পারছে না! সায়ান ভাবছে- সে যুগের সাথে তাল মেলাতে পারছে না? সে কি ব্যাকডেটেড?
কিন্তু সে জানে যে, সে নিশিকে খুব ভালোবাসে বলেই হিজাব পড়তে বলত এবং ঠিকভাবে নিজেকে পর্দা করতে বলত!
সবাই বিয়েতে খুব আনন্দ করছে। কিন্তু সায়ান এই আননন্দের মাঝেও যেন কি একটা নেই নেই ফিল হচ্ছে। সে বাড়ি যাবে। কিন্তু নিশি রাগ হবে তাই যাচ্ছে না!
যাক শেষমেশ সব ভালোমতো শেষ হয়েছে।
এখন নিশি আর সায়ান রিকশা দিয়ে বাড়ি যাচ্ছে!
নিশি- সায়ান আমার মনে হচ্ছে তুমি আমার উপর বিরক্ত? আমার সাথে তেমন কথাও বলছো না। কিছু হয়েছে?
সায়ান উত্তর দিল- নিশি, তোমার কি মনে হয় না কিছু হচ্ছে?
নিশি কিছু সময় চুপ থেকে বলে- সায়ান, কি হয়েছে? আমার তেমন তো মনে হচ্ছে না!
সায়ান- তোমার কিছু মনে না হলে, কিছুই হয় নাই! সবই ঠিক আছে, নিশি।
তারা বাড়ি চলে যায়।
দুই দিন পর নিশি ক্যাম্পাসে আসে। আর নিশি ভালো ছাত্রী। তাই তাকে ক্লাসের অনেকেই পছন্দ করে না! বিশেষকরে নিশিকে সাদিয়া একদমই পছন্দ করে না।
সে এসে বলেই ফেলল, কিরে তোর হুজুর বিএফ কি ছেড়ে দিয়েছে নাকি তোকে? দুইদিন হিজাব পড়ছিস তো দুইদিন বেপর্দা? আবার ওইদিন তানিয়ার সাথে টিকটকে ভিডিও বানাচ্ছিস দেখলাম!
নিশি চুপচাপ কথাগুলো শুনে ক্লাস না করেই বেরিয়ে এলো..
সে অঝোরে কান্না শুরু করল। একা একা বসে ভাবতে লাগলো ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ একটা মেয়ে আজ তাকে এমন কথা শোনাচ্ছে।
সে এখন সায়ানের কাছে যায়, সায়ানকে সবকিছু বলে কান্না করছে!.
সায়ান বলছে- নিশি, আমি তোমাকে অনেক বুঝিয়েছি।
আমাদের জীবনকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ো না, কেননা "যুগ" আমাদের জীবনে ভেসে আসে, আমাদের জীবন "যুগের" মাঝে ভেসে বেড়ায় না!
যেটা প্রয়োজন সেটা করার জন্য তোমাকে আমি সবসময় বুঝিয়েও গত ১০দিন তোমাকে অন্য নিশি হিসেবে দেখছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম!
নিশি- হ্যাঁ, জানি আমি ভুল করেছি। সায়ান, আমি ভুল করেছি!
আমি জানি আমি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে আমি তোমাকে হারাতে যাচ্ছিলাম, নিজের আত্মসম্মান হারিয়ে ফেলছিলাম।
আজ আমি সত্যি লজ্জিত নিজের কাছে এবং তোমার কাছে।
আমাকে ক্ষমা করো সায়ান! আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুক!
সায়ান নিশির দিকে তাকিয়ে অনেক সুন্দর করে একটি হাসি দিয়ে পানির বোতলটা এগিয়ে দিল! নিশিও ওর কান্না বন্ধ করে চোখ মুছে পানি পান করল।
আর সায়ান আকাশে তাকিয়ে, তুমি চাইলে কি না সম্ভব হয় আল্লাহ!!!