বর্তমান সময়ে টেক নিয়ে কিছু খোঁজ খবর রাখে অথচ আর্টিফিশিয়াল ইনটিলিজেন্স এর নাম শুনেনি এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। মিউজিক রিকমেন্ডেশন থেকে গুগল ম্যাপ, উবার কিংবা হালের সোফিয়া সবই আর্টিফিশিয়াল ইনটিলিজেন্স প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি। এর সাথে রয়েছে আরো কয়েকটি টার্ম, যেমনঃ মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং। এইটার্ম গুলো নিয়ে প্রায়শই আমাদের মধ্যে কনফিউশন তৈরি হয় যে আদতে এগুলো একই নাকি ভিন্ন। চলুন তবে দূর করা নেওয়া যাক আমাদের মধ্যে থাকা বিদ্যমান কনফিউশন।

 
   

আর্টিফিশিয়াল ইনটিলিজেন্স:  




গণিত, জীববিজ্ঞানের মতো আর্টিফিশিয়াল ইনটিলিজেন্স বৈজ্ঞানিক একটি শাখা। এটি বলতে বোঝায়, মেশিন গুলোর প্রোগ্রাম এমন ভাবে তৈরি করা হয় যা মানুষের বুদ্ধির অনুকরণ, চিন্তা এবং তাদের ক্রিয়াকলাপ নকল‌ করতে পারে।
 
আর্টিফিশিয়াল ইনটিলিজেন্স এর ইতিহাস: 

এই টার্মটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ১৯৫৬ সালে, ডর্টমুথ কম্পিউটার সায়েন্স কনফারেন্সে। এটিকে তখন বর্ণনা করা হয়েছিল মানুষের মস্তিষ্কের কার্যাবলীর উপর ভিত্তি করে বানানো কম্পিউটার প্রোগ্রাম। কনফারেন্স থেকে খুবই প্রতিভাবান ব্যক্তিদের নিয়ে একটি টিম তৈরি করা হয়েছিল, তাদের ধারণা ছিল মস্তিষ্কের কার্যাবলী প্রোগ্রামিংয়ে পরিণত করা ওতো কঠিন হবে না। এটি অবশ্যই ভুল একটি ধারণা ছিল।আজও আমরা এর বাস্তবে রূপান্তর করতে পারিনি। তবে তারা সমসাময়িক কিছু কাজে সফল ছিল।

আর্টিফিশিয়াল ইনটিলিজেন্স(AI) এর প্রকারভেদ:




Weak AI: এ ধরণের AI একটি নির্দিষ্ট কাজে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে পারে। তার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের বাহিরে কোন কাজ সে করতে পারে না। যেমনঃ Microsoft এর Cortana, Apple এর  Siri.

General AI: মানুষের কোন কমান্ড ছাড়াই এই AI নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যৌক্তিক সমস্যার সমাধান ছাড়াও তাদের আবেগ অনুভূতি আছে বলে দাবি করা হয়।

Super intelligence AI: এরা বুদ্ধিমত্তায় মানুষকেও ছাড়িয়ে যাবে। বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, প্রতিভাবান ও সামাজিক আচরণে শিক্ষিত এই AI এর উদ্দেশ্য মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা ‌অথবা ধ্বংসযজ্ঞ চালানো।
   






মেশিন লার্নিং: 





মেশিন লার্নিং হলো আর্টিফিশিয়াল ইনটিলিজেন্স এর একটি উপসেট। যখন কোন একটা সমস্যার সমাধানের জন্য প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যম এমন একটা অ্যালগরিদম ইমপ্লিমেন্ট করানো হয় যাতে কম্পিউটার নিজেই পরিবেশ এবং পূর্বের ঘটনা থেকে শিখতে পারে তখন এটাই মেশিন লার্নিং। বিভিন্ন এলগরিদম সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।

মেশিন কিভাবে শিখেঃ 

মেশিন কে শিখানোর জন্য তিনটি উপাদান এর প্রয়োজন হয়ঃ  



১. Dataset (ডাটাসেট)
২. Algorithm (এলগরিদম)
৩. Features (ফিচারস) 

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, মেশিন কে অনেক ডাটা দিতে হয়, যেখানে সে একটা প্যাটার্ন খুঁজে বের করে এবং নিউরাল নেটওয়ার্কে প্রসেস হয়। এরপর নতুন  কোন ডাটা প্রদান করলে আগের ডাটার সাথে তুলনা করে ট্রু বা ফলস সিদ্ধান্ত দেয়। নিউরাল নেটওয়ার্ক যত বড় হবে, পারফরম্যান্স তত নিখুঁত হবে। তাই আমাদের অধিক সংখ্যক ডাটা সংগ্রহ করা প্রয়োজন।






আমরা মোটামুটিভাবে মেশিন লার্নিংকে বিশেষ চারটি শ্রেণিতে ভাগ করতে পারি।

১. Supervised Learning. (সুপারভাইসড লার্নিং)।
২. Unsupervised learning. (আনসুপারভাইসড লার্নিং)।
৩. Semi-Supervised learning. (সেমি-সুপারভাইসড লার্নিং)।
৪. Reinforcement learning. (রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং)।    
 



ডিপ লার্নিংঃ 






সায়েন্স ফিকশন বয়সের দিক থেকে শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে। সায়েন্স ফিকশন গুলোর শুরুর দিক থেকেই আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন যন্ত্রের দেখা পেয়ে আসছি। বাস্তবে এখনও বুদ্ধিমত্তার সেই স্তরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি মানুষের পক্ষে। তবে সেই পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে মানুষ।
কম্পিউটিংয়ের গতিশীল ধারায় এমন প্রযুক্তি মানুষ উদ্ভাবন করতে সমর্থ হয়েছে, যাতে করে এখন যন্ত্র-মানবেরা সনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছে বস্তুকে। এখন যন্ত্রের মাধ্যমে রিয়েল-টাইমে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ পাওয়া যাচ্ছে। যন্ত্রের এই শিক্ষণ-পদ্ধতিকেই বলা হচ্ছে ‘ডিপ লার্নিং’।
 
"ডিপ লার্নিং", ডিপ স্ট্রাকচারড লার্নিং, হায়ারারকিকাল লার্নিং বা ডিপ মেশিন লার্নিং নামেও পরিচিত।
ডিপ লার্নিং হচ্ছে মেশিন লার্নিং এর একটি ব্র্যাঞ্চ বা একটা মেশিন লার্নিং টেকনিক যা কিনা নিজে নিজেই সরাসরি ডাটা থেকে ফিচার এবং টাস্ক শিখে নিতে পারে। সেই ডাটা হতে পারে ইমেজ, টেক্সট এমনকি সাউন্ড। বেশিরভাগ ডিপ লার্নিং পদ্ধতি সাধারণত নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। ডিপ শব্দটা এ কারণে ব্যবহার করা হয় যে এখানে নেটওয়ার্কের অনেকগুলো স্তর থাকে‌।

ডিপ-লার্নিং সিস্টেম প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ইউটিউব। ইউটিউব থেকে ডিপ লার্নিং এর সাহায্যে প্রায় ১০ মিলিয়ন ছবি বাছাই করে প্রদর্শন করে, যেসব ছবিতে সুনির্দিষ্ট কোনো বস্তুর অবস্থান রয়েছে। আবার মাইক্রোসফট রিয়েল টাইমে ভাষান্তরের সফটওয়্যার তৈরি করেছে এরই মধ্যে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছে এমন আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। প্রকৃতপক্ষে ‘ডিপ লার্নিং’ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাকে ভিন্ন একটি স্তরে পৌঁছে দিচ্ছে। যা সায়েন্স ফিকশনকে বাস্তবে পরিণত করতে সহায়তা করছে।    




ডিপ লার্নিং এর অ্যাপ্লিকেশনসমূহঃ 

১. ছবি থেকে বিভিন্ন অবজেক্ট চিহ্নিতকরন এবং ক্লাসিফিকেশন তৈরি করা
২. সাদা ও কালো ছবির Colorization
৩. ছবিতে ক্যাপশন জেনারেশন এবং চিহ্নিতকরন
৪. স্বয়ংক্রিয় হস্তাক্ষর জেনারেশন এবং চিহ্নিতকরন
৫. ক্যারেক্টার টেক্সট জেনারেশন এবং চিহ্নিতকরন
৬. নির্বাক চলচ্চিত্রের সাউন্ড যোগ করার পদ্ধতি
৭. শব্দ থেকে টেক্সট জেনারেশন
৮. স্বয়ংক্রিয় মেশিন ট্রান্সলেসন
৯. স্বয়ংক্রিয় গেম খেলা
১০. বিগ ডাটা এনালাইসিস
১১. আরও অন্যান্য চমকপ্রদ কিছু অ্যাপ্লিকেশন আছে।

এখানে শুধুমাত্র প্রতিটি বিষয়ে বেসিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। মানুষের মতো বুদ্ধিমান যন্ত্র তৈরি এখনো হাতের নাগালের বাইরে হলেও ইতোমধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইনটিলিজেন্স কম্পিউটেশন, প্যাটার্ন রিকগনিশনে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে।


তথ্যসূত্রঃ    





ছবি: মিডিয়াম এবং গুগল

নুসরাত মিতু
কৈশোর কাল থেকে কোন এক আলেয়ার পিছনে ছুটে চলছে লেখক। এ যেন‌ নিরন্তর এক যাত্রা। আপাতত সে খুব আনন্দের সাথেই করছে এ কাজ।